
শুরু করবো একটি ছোট গল্প দিয়ে “শাঁখের করাত”
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে- দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া। পিঠ ঠেকে যাবার ঠিক আগে একবার ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করতে হয়। এই পূর্বমুহূর্তটা বোঝা এজন্যেই খুব দরকার যে, পিঠ ঠেকে গেলে চাইলেও ঘুরে দাঁড়ানো যাবে না। তখন পড়তে হয় শাঁখের করাতের নিচে- যা আসতেও কাটে, যেতেও কাটে।
বি এনপি অভিজ্ঞ দল। দলটির রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বহু বছরের। কোনো রাজনৈতিক দলে নেতা-নেত্রীর প্রাণ ভোমরা হলো ক্ষমতা, কিংবা অদূর ভবিষ্যতে ক্ষমতা পাবার সম্ভাবনা। গত নির্বাচন তাঁরা বয়কট করেছিলেন এই ভেবে- তাঁরা মাঠে না এলে নির্বাচন হবে না; কিংবা যদি হয়েও যায় আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন করা হবে অবশ্যম্ভাবী। এরপর তাঁদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো, নির্বাচন হয়ে। এবং তাঁরা যে ভুল করেছেন এটি প্রমাণিত হলো- বেশ ক’ বছর আগেই। যখন এত হরতাল-অবরোধের পরও সরকারকে ক্ষমতার গদি থেকে নড়ানো গেলো না।
সেসব দিন দাঁতে দাঁত কামড়ে পার করতে হয়েছে বিএনপির। তখনকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, না-করা নিয়েই দলে নেতাদের মধ্যে ভিন্নমত ছিলো। এরপর, প্রায় চার বছর কেটে গেছে। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবার সময় চলে এসেছে। লেখার শুরুতেই শাঁখের করাতের উদাহরণটা এই মুহূর্তে বিএনপির জন্যে একটা উপযুক্ত বিশেষণ হতে পারে। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা একদিকে ভাবছেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
অন্যদিকে তাঁদের ভাবতে হচ্ছে, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে গতবার যে ভুলটা করেছেন তার পুনরাবৃত্তি দলটির ভেতর অনেক নেতাই চাইবেন না। নির্বাচনের পর সরকারী দলকে ক্ষমতা থেকে সরানো যে সম্ভব না, তা তো বিএনপির পূর্বে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান। অতএব, নির্বাচনে না যাওয়াটা হবে স্বেচ্ছায় বনবাসের মতো। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ের বহু নেতা স্বেচ্ছায় বনবাসে যাবার ইচ্ছে পোষণ করবেন না- তাই দেখা দেবে দলটির ভেতর অসংখ্য দল, অসংখ্য মত এবং অসন্তোষ।
বিএনপি নির্বাচনের আগে যে বিষয়টাতে আগ্রহী, তা হলো সংলাপ। এটি অবশ্যই দরকার। এক টেবিলে আলোচনায় বসলে বহু বড় সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। কিন্তু ওর চেয়ে বড় সমস্যা হলো, আমাদের দেশের সরকার এবং বিরোধী দলীয়রা ঠিক একই সময়ে ঠিক একই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তারই ধারাবাহিকতা অদূর ভবিষ্যতে বিনষ্ট হবে বলে আমরা আশান্বিত হতে পারি না। অতএব বিএনপি সংলাপ চাইলেও সরকারদলীয় জোট যে এখন সংলাপে বসবে না, তা অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। সে আশা তাই বিএনপির অংকুরেই বিনষ্ট হবে।
তবে আমাদের ক্ষেত্রে একটা আশা রয়েছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেছেন, ‘এবার আওয়ামীলীগকে খালি মাঠে গোল করতে দেয়া হবে না।’ এর অর্থ- নিশ্চয়ই খেলা হবে, এবং খেলাতে প্রতিপক্ষ থাকবে। বিএনপি প্রকারান্তে মেনেই নিয়েছে- নির্বাচন এই সরকারের অধীনেই করা হবে, এবং তাতে তারা হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে না আগের মতো। বরং মাঠে নামবে। এটি শুভ সংকেত, গণতান্ত্রিক ভাবে সকল দলের অংশগ্রহণ যেন অন্তত নিশ্চিত হয়।
একটা প্রবাদ দিয়ে শুরু করেছিলাম, শেষ করি ছোট্ট একটা গল্প দিয়ে। সরকার দলীয় এক সাংসদ অসুস্থ। মর-মরো অবস্থা। তাঁর কাছের কেউ কানে কানে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মৃত্যুর পূর্বে আপনার শেষ ইচ্ছে কী? সাংসদ বললেন, ‘আমি বিরোধী দলে যোগ দিতে চাই।
শুনে তো সকলেই অবাক। বললো, ‘আপনি সারাজীবন এই দলের সাথে থেকে এত কিছু করলেন, এখন বিরোধী দলে যেতে চাইছেন কেন?’ সাংসদ একটু হেসে জবাব দিলেন, ‘মরার আগে এই ভেবে শান্তি পাবো, বিরোধী দলের একজন মরেছে।’ nআমাদের দেশীয় নেতা-নেত্রীদের এমন ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজের নাক কেটে অন্যের ক্ষতি করবার চেয়ে দুপক্ষের পারস্পরিক সহযোগিতায়ই জাতি বেশি উপকৃত হবে।
তবে আমরা সাধারণ মানুষ আশা করব সকল দলের অংশগ্রহনের এর মাধ্যমে একটি সুষ্ঠ সুন্দর নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্টিত হবে দেশের মঙ্গলের জন্য এই কামনা করি।
Leave a Reply