
বিমানবন্দরের কর্মচারীদের ছোটখাটো ভুল বা অনিয়ম সংশোধনের জন্য বইপড়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে। প্রদত্ত সেই বই পড়ে সেটির উপর লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করলে তবেই অব্যাহতি মিলছে। পাশ করার পর যে বইটি পড়েছে তার একটি নতুন কপি এবং আরো নতুন একটি বইও লাইব্রেরিতে জমা রাখতে হবে।
আগামীতে আবার এ ধরনের কাজ করলে, সেই দুটি বই পড়ে আবার পরীক্ষা দিতে হবে। প্রজেক্ট টুকিটাকি নামে এই ব্যবস্থা চালু করেছেন এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট। “সর্বোচ্চ সাতদিনের মধ্যে একটি বই পড়ে পরীক্ষা দিতে হবে, অনেকটা বুক রিভিউর মতো,” বলছিলেন অল এয়ারপোর্ট বাংলাদেশ-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ।
বিমানবন্দরের ভেতরে মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা করেন তানজির ইসলাম। সম্প্রতি নিয়মবহির্ভূতভাবে যাত্রীদের ডাকাডাকি করছিলেন তিনি। কিন্তু ধরা পড়লেন এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে। নির্ধারিত শাস্তি ছাড়াও তাকে দেওয়া হলো আরও অভিনব উপায় সংশোধনের সুযোগ – বই পড়তে হবে। শুধু বই পড়লেই চলবে না, সেখানে থেকে কী শিখছে সেটারও পরীক্ষায় পাশ করতে হবে।
“আমরা তো একটা অন্যায়ের শাস্তি হিসেবে বইটা পড়ছি, তাই হাতে বই দেখে কলিগরা হাসাহাসি শুরু করে দেয়, কি ভাই বই পড়া কতদূর, কি পড়লেন ভাই – এসব বলে মজা নিয়েছে,”বলছিলেন তানজির ইসলাম। এই উদ্যোগ কি অপরাধীদের শাস্তি থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে মি: ইউসূফ বলেন, “অপরাধ করার পরে কিন্তু আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছিনা, ঠিকই জেল জরিমানা দিচ্ছি।” “যে অপরাধে আমরা আগে শুধু সতর্ক করে ছেড়ে দিতাম, সেগুলো সংশোধনের জন্য বই পড়ার নিয়ম চালু করেছি,”বলেন তিনি।
এক মাসেরও কম সময়ে প্রায় অর্ধ-শতাধিক কর্মচারী এই নিয়মের আওতায় এসেছেন। শুরুতে প্রতিদিন দুই তিনজন অনিয়মে অভিযুক্ত হলেও প্রজেক্ট টুকিটাকি শুরু হওয়ার পর এখন সে হার কমছে। মি: ইউসুফ জানান, “লুকিয়ে বইপড়া অনেকের কাছে বাড়তি একটা চাপ। হঠাৎ হাতে বই দেখলে কলিগরা বুঝে ফেলছে, বাসার লোকজন বুঝে ফেলছে, সে কোন একটা অন্যায় করে ধরা পড়েছে।”
এমন ভুল বা অনিয়মের মধ্যে রয়েছে: যাত্রীদেরকে ট্রলি নিয়ে হয়রানি করা অথবা তাদের থেকে টাকা আদায় যাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণ নির্দিষ্ট সীমারেখা বা জোন অতিক্রম করা ইমিগ্রেশন কার্ড পূরণের সময় যাত্রীদের কাছ থেকে বখশিশ নেওয়া মানি এক্সচেঞ্জের জন্য যাত্রীদের ডাকাডাকি করা ইত্যাদি কীভাবে শুরু হলো এই উদ্যোগ? শুরুতে ম্যাজিস্ট্রেটদের নিজেদের উদ্যোগে কিছু বই কেনা হয়। পরবর্তীতে দন্ডপ্রাপ্ত কর্মচারীরা শাস্তি হিসেবে যেসব নতুন বই জমা রাখছে তাতেই সমৃদ্ধ হচ্ছে এই লাইব্রেরিতে, এমনটা জানালেন মি: ইউসুফ। শুধু অনিয়ম নয়, কোন কর্মচারী ভালো কাজ করলেও পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হচ্ছে বই, তিনি বলেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply