
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শ্রীমঙ্গলের মণিপুরি তাঁত পল্লীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রীমঙ্গলের নারী তাঁত শ্রমিকরা। নিজেদের পরিধেয় বস্ত্র নিজেরাই তৈরি করেন কোমর তাঁতের মাধ্যমে। এ কোমর তাঁতকে আবার অনেকে কিছুটা হলেও বাণিজ্যিকভাবেও নিয়েছেন। অবসর সময়ে নিজ উদ্যোগে নিজ ঘরে বসে কোমর তাঁতের মাধ্যমে বস্ত্র তৈরি করেন। যা চাহিদা অনুযায়ী বিক্রিও করা হয়।
পাহাড়ের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে রয়েছে কম-বেশি কোমর তাঁত। প্রত্যেক ঘরেই নারীরা কোমর তাঁতের মাধ্যমে তৈরি করছেন নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। এসবের মধ্যে রয়েছে থামি, পিনন, ওড়না, রুমাল, ব্যাগসহ নানা কিছু। স্থানীয় রামনগর মণিপুরি এলাকার মণিপুরি মার্কেটের দোকান এবং পর্যটক এলাকার বিভিন্ন দোকানে এসব বিক্রি করে আয়ও করেন অনেক নারীরা।
পাহাড়ের পান অধ্যুষিত দরিদ্র এলাকায় পানচাষ শেষ হওয়ার পর বেশির ভাগ নারী বেকার হয়ে পড়েন। এ সময় তাঁরা ঘরে অলস সময় না কাটিয়ে কোমর তাঁতে কাপড় তৈরি করেন। বাজারে ভালো দাম থাকায় কোমর তাঁতে কাপড় তৈরির মাধ্যমে সংসারের চাহিদার একটি অংশের জোগান হয় নারীদের এ ক্ষুদ্র শিল্প থেকে।
বৈশাখ উপলক্ষে বাহারি ডিজাইনের শাড়ি প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিক্রিও অনেক ভালো। তবে সুতার দাম ও রংয়ের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তাদের। উৎসবকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারদের পাশাপাশি খুচরা ক্রেতাও শাড়ি কিনতে ভিড় করছেন মনিপুরি পাইকারি দোকানগুলোতে।
তাঁদের একজন সুমন্তি ত্রিপুরা (৪৬) জানালেন, দীর্ঘদিন ধরে এই পেশায় জড়িত। শুধু পানচাষের ওপর নিভর্র করে সংসার চলে না। তার ওপর কাপড় যদি বাজার থেকে কিনে আনতে হতো তাহলে আয়ের আরো বিশাল একটি অংশ কাপড়ে চলে যেত। তাই অবসর সময়ে নিজেদের পরনের কাপড় তৈরি করা হয়।
আর বাড়তি কাপড় বিক্রি করে কিছু আয়ও হয়ে থাকে। নিকট অতীতেও উত্পাদিত তুলা থেকে চরকার সাহায্যে থেকে সুতা তৈরি করে সে সুতা দিয়ে কাপড় তৈরি করা হত। কিন্তু এখন সময় বাঁচানোর জন্য বাজার থেকে সুতা কিনে কাপড় তৈরি করা হয়। এতে খরচ বেড়েছে।
শহর বা জেলা সদরের নারীদের তাঁদের ঐতিহ্যগত পোশাক কোমর তাঁতের থামি বা পিনন পরিধান করতে এখন কম দেখা গেলেও গ্রামাঞ্চলের নারীদের এখনো প্রধান পোশাক কোমর তাঁতে তৈরি পিনন বা থামি। তাই পাহাড়ী নারীদের মাঝেই এখনো কোমর তাঁত বেশির ভাগ চোখে পড়ে। একটি থামির কাজ শেষ করতে সময় লাগে ৪ থেকে ৭ দিন। ভালো মানের একটি থামি বিক্রি হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। শ্রম এবং সুতার মূল্য হিসেবে একটি থামি বিক্রি করলে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা লাভ থাকে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply