
আসছে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-২(সদর) এবং নাটোর-৪(গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) দুটি আসনে নির্বাাচনে লড়বেন বিএনপি-র হেভিওয়েট প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
১২ বছর ক্ষমতায় নেই বিএনপি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বয়কোট করে ৫ বছর ধরে সংসদে নেই। তার ওপর হামলা-মামলা ও পুলিশি গ্রেপ্তার আতঙ্কে কোনঠাসা বিএনপি। তার ওপর দলীয় কোন্দলে সাংগঠনিক নাজুক অবস্থায় পড়েছে স্থানীয় বিএনপি।
এমন পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনে দলের যোগ্য, শক্তিশালী ও জনপ্রিয় প্রার্থীর সংকটে পড়েছে নির্বাচনী এলাকার বিএনপি সমর্থিত নেতা-কর্মীরা। গ্রুপ ভিত্তিক রাজনীতি ও উপদলীয় কোন্দল স্থানীয় বিএনপিতে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দলের এমন নাজুক পরিস্থিতিতে জেলা বিএনপির সভাপতি ও দলের কেন্দ্রিয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে এই আসনে দলীয় প্রার্থীতার দাবী তুলছেন দুই উপজেলার নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।
কারন হিসেবে গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন বিএনপি নেতা বলেন, দল ক্ষমতায় না থাকায় এই আসনের সাবেক সাংসদ এম. মোজাম্মেল হক এলাকা ছাড়া ও বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ একরামূল হক ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর মারা যাওয়ার পর দুই উপজেলা বিএনপি নেতৃত্ব সংকটে পড়ে। নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর দিকনির্দেশনায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্থানীয় বিএনপির কর্মকা-। দলীয় প্রার্থী হিসেবে তিনিই এখন শেষ ভরসা।
এ প্রসঙ্গে গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র মো. আমজাদ হোসেন আমজাদ বলেন, ইতিমধ্যে গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আজিজ দলীয় নেতা-কর্মীদের মতামতকে উপেক্ষা করেই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।
অথচ তার বিরুদ্ধে তৃণমুলে পকেট কমিটি গঠন, দলের নেতা-কর্মীদের সাথে বৈরী আচরণ এবং সরকারি দলের সাথে আঁতাত করে রাজনীতি করার অভিযোগও রয়েছে। তাছাড়া বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের জনপ্রিয় ও ত্যাগীনেতাদের দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। একারনে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গুরুদাসপুর পৌরসভাসহ উপজেলার নাজিরপুর ও চাপিলা ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছেন। নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় তিনি নিজে কোন দলীয় প্রগ্রাম করেননা। এমন কি দলীয় কোন অনুষ্ঠানে যোগদানও করছেনা তিনি।
গুরুদাসপুর পৌর বিএনপির সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মশিউর রহমান বাবলু বলেন, দলের সাংগঠনিক অবস্থা বিবেচনা করে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে এই আসনে প্রার্থী হলে দলের ভেতর কোন কোন্দল বা উপদলীয় কোন্দল থাকবেনা। যদিও আমি মনোনয় চাইবো।
গুরুদাসপুর পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো.দুলাল সরকার মনে করেন, বিএনপি দীর্ঘ দিন রাস্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। এ সুযোগে সাবেক সাংসদ এম.মোজাম্মেল হক ও পৌর বিএনপি সভাপতি মশিউর রহমান বাবুলও এলাকায় থাকেননা। উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ নানা কারনে বিতর্কিত দলে। তাদের কারনেই অন্ত.কলহে বিভক্ত দলটি। এমতাবস্থায় জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে এই আসনে প্রার্থী করার কথা ভাবছে সকল নেতা-কর্মীরা। তিনি প্রার্থী হলে দল আবার সংগঠিত হবে। আসনটি পুনরুদ্ধার সহজ হবে।
বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা এবং নাটোর ৪ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী এ্যাডভোকেট জন গমেস বলেন,রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে নাটোর ৪ আসন থেকে প্রার্থী করা হলে আমাদের কোন আপত্তি নেই ।বরং আমরা সবাই তাকে বিজয়ী করতে একযোগে কাজ করবো।
বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মো. হযরত আলী বলেন, বড়াইগ্রামের রাজনীতি অধ্যক্ষ একরামুল নির্ভরশীল ছিল। তিনি মারা যাওয়ার পর নেতৃত্ব সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক সাংসদ এম.মোজাম্মেল হক খোঁজ খবর রাখছেননা। আগামী নির্বাচনে দলের নেতৃত্ব দেওয়া এবং প্রার্থী হওয়ারমত যোগ্য নেতার অভাব রয়েছে।বর্তমানে জেলা বিএনপির সভাপতির নির্দেশনায় সাংগঠনিক ও দলীয় কার্যক্রম চলছে। জেলা বিএনপির সভাপতি রুহুলকুদ্দুস তালুকদার দুলু ছাড়া এই আসনে হাল ধরারমত কেউ নেই।
বড়াইগ্রাম ও বনপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মুক্তার হোসেন ও মো. লুৎফর রহমান বলেন, প্রায় একযুগ ধরে স্থানীয় বিএনপি নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে। জেলা বিএনপির সভাপতি অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করলেও দলের দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী এম.মোজাম্মেল হক ও আব্দুল আজিজ নেতা-কর্মীদের দুঃসময়ে পাশে নেই। আগামীতে তাঁদের দিয়ে আসনটি পুনঃরুদ্ধার সম্ভব নয়।
গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আব্দুল আজিজ বলেন, গঠনতন্ত্র মেনে কমিটি গঠনসহ দল পরিচালনা করছেন তিনি। তৃনমুল বিএনপির সমর্থন নিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন। তাঁর জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে দলের কতিপয় নেতা আমার বিরুদ্ধে বিষোদগারে নেমেছেন। তবে দুলু ভাই প্রার্থী হলে আমার সমর্থন থাকবে।
সাবেক সাংসদ এম.মোজাম্মেল হক মুঠোফোনে বলেন, দেশের পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে তিনি ঢাকায় থাকেন। তবে এলাকার নেতা-কর্মীদের সাথে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। এমাসের মধ্যেই তিনি এলাকায় গিয়ে গনসংযোগে নামবেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু মুঠোফোনে বলেন, সাবেক সাংসদ এম.মোজাম্মেল হকে নিস্ক্রিয়তার কারনেই বিএনপি অনেকটা অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে। দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগীতা রয়েছে। কোন্দল এড়াতে নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীরা আমাকে নাটের-৪ আসনে প্রার্থী করার দাবী জানিয়েছেন। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচনও করবেন তিনি। তাঁরমতে, নাটোর-৪ আসনে বিএনপির সমর্থক বেশি থাকলেও শক্তিশালী ও জনপ্রিয় প্রার্থীর অভাবে আসনটি ধরে রাখা যাচ্ছেনা। তিনি প্রার্থী হলে মতভেদ ভুলে আস্থাশীল নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply