
বাঙ্গালির শীতকালের সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে আছে পিঠা উৎসব। কেবল গ্রামেই নয়, শহুরে জীবনে পিঠার বাণিজ্যিক চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ঢাকা বা অন্যান্য জেলা শহরের অলিতে-গলিতে গজিয়ে ওঠা অনেক পিঠার দোকান ও ভ্যানে হরেক রকমের পিঠা পাওয়া। রাজধানীর পান্থপথ, বেইলী রোডসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় গড়ে উঠেছে পিঠার অনেক শোরুম।
অনেক মিষ্টির দোকানে পাওয়া যাচ্ছে পিঠা। এমনকি অনলাইন ফুড আউটলেটেও নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে পিঠা। বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে এসব পিঠা অর্ডার দিয়ে পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
রাজধানী বা অন্যান্য জেলা শহরের অলিতে-গলিতে পিঠার দোকান ও ভ্যানের সবচেয়ে কমন পিঠা তেলে পিঠা বা পোয়া, চিতই ও ভাপা। গরম, ধোঁয়া ওঠা ভাপা অবশ্য শীতকালেই চলে। এছাড়া রয়েছে হরেক রকমের পিঠা। তবে বছরজুড়ে নাগরিক জীবনে নাস্তার চাহিদা মেটাচ্ছে চিতই। ৭-৮ রকমের ভর্তা দেয়া এ পিঠার সঙ্গে। দাম ৫-১০ টাকা। তাই ভরপেট নাস্তা বা বৈকালিক খাবারের চাহিদা এ পিঠাই মেটাচ্ছে।
বাংলাদেশের পিঠার নাম বলে শেষ করা যাবে না। অঞ্চলভেদে এমনকি গ্রামভেদে পিঠার ধরন, উপকরণ আলাদা হয়। চালের গুঁড়া ছাড়া পিঠায় মূল উপকরণে মিল পাওয়া কঠিন। এসব পিঠার মধ্যে পরিচিত পিঠাগুলো হচ্ছে ভাপা, চিতই, পোয়া, মাল পোয়া ছাঁচ পিঠা, ছিটকা, আস্কে, চুটকি পিঠা, চাপড়ি, চাঁদ পাকন, ছিট, সুন্দরী পাকন, সরভাজা, পুলি, চন্দ্রপুলি, মুখ সল্লা, পাতা পিঠা, পাটিসাপটা, মুগ পাক্কন, মেরা পিঠা, মালাই পুলি, মুঠি পিঠা, আন্দশা, কুলশি, খেজুর কাটা নকশি, কলা/পানা পিঠা, খেজুর ঝুরি, ক্ষীর কুলি, গোকুল, গোলাপ পাক্কন, লবঙ্গ লতিকা, রসফুল, ঝিনুক ও দুধরাজ।
অনলাইন ফুড আউটলেট ‘ধবল’ পিঠা বিক্রি করছে ২ বছর ধরে। এর কর্ণধার আসমা হক কান্তা জানান, ‘২০১৬ সালের শেষ দিক থেকে পিঠা সাপ্লাই শুরু করেছি। প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ টা আইটেমের অর্ডার আসে ক্রেতাদের কাছ থেকে।’ পিঠা সরবরাহ করে কুলিয়ে ওঠা যায় না বলে তিনি জানান।
হাতে কাটা সেমাই, দুধপুলি, ভাপার চাহিদা সবচেয়ে বেশি তার প্রতিষ্ঠানে। শীতকালে পিঠা উৎসবের মতো বড় বড় আয়োজনেও তাকে পিঠা দিতে হয়েছে। কর্পোরেট ক্লায়েন্টদেরও পিঠার চাহিদা প্রচুর। ৮ জন নারী প্রতিদিন পিঠা তৈরি করছেন তার এখানে। দু’জন ব্যক্তিগত ডেলিভারি ম্যানসহ বাইরের ডেলিভারি সার্ভিস নিত্য কাজ করে যাচ্ছে পিঠা সরবরাহের।
অন্যদিকে দেশি খাবারের দোকান মাদল খাবার ঘরের বড় অনুষঙ্গ পিঠা। পান্থপথের এ দোকানে সামনাসামনি পিঠা বানিয়ে পরিবেশন করা হয় আর সকাল থেকেই শুরু হয় পিঠার নানা আইটেম বিক্রি। বিয়ে বাড়ি, ঢাকা লিট ফেস্টের মতো বড় বড় আয়োজনে মাদল পিঠা সরবরাহ করেছে, কোথাও লাইভ পিঠা শোও করেছে। মাদলের কর্ণধার মাসুমা খাতুন শাম্মি জানান, ‘সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত লাইভ পিঠা বানানো চলে মাদলে। এর মাঝে তিন ঘণ্টা ব্রেক থাকে কর্মচারীদের। কিন্তু অধিকাংশ সময় অতিরিক্ত অর্ডারের চাপে অনবরত পিঠা বানিয়ে যান তারা।’
শুধু মাদল খাবার ঘরে নয়, বিয়ে বাড়ির মতো আয়োজনেও লাইভ পিঠা করেছে মাদল। এখানে অন্য খাবারের তুলনায় পিঠার চাহিদা বেশি। বেশিরভাগ সময় লাইন ধরে পিঠা কেনেন ক্রেতারা। মাসুমা খাতুন শাম্মি মনে করেন, এই সময় শিশু, কিশোর ও তরুণরা ফাস্টফুড সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে পিঠার ভক্ত হচ্ছে। তিনি এও জানান, গত ঢাকা লিট ফেস্টে তিনি ø্যাকস আইটেম হিসেবে সিঙ্গারা, সমুচা, রোল রেখেছিলেন, এবার যোগ করেছিলেন পিঠা। দেশি-বিদেশি লেখক ও অতিথি সবাই পিঠাই খেয়েছেন বেশি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ মোঃ মোস্তফা কামাল
Leave a Reply