
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদারের জামাতা রাজন কর্মকারের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সোমবার (১৮ মার্চ) সকালে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করেন সোহরাওয়ার্দীর ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সেলিম রেজা। তবে তিনি ময়না তদন্ত সম্পর্কে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাকে মর্গ গেটে পাওয়া যায়। এ সময় তিনি বলেন, আমি কিছু বলব না, রিপোর্ট করবো, পুলিশকে দেব, তাদের সাথে কথা বলবো।
তবে পরিবার ও সহকর্মী চিকিৎসক-চিকিৎসক নেতাদের অভিযোগ- পারিবারিক কলহের জেরে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের বড় মেয়ে কৃষ্ণা কাবেরীর স্বামী রাজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
পরিবার ও সহকর্মী চিকিৎসক-চিকিৎসক নেতাদেরই জোরালো দাবির মুখে ১৭ মার্চ সন্ধ্যার দিকে রাজন কর্মকারের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেছে।
শেরে বাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম মুন্সি রোববার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় দৈনিক জাগরণকে বলেন, মৃতের মামা বাদী হয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। সেটা আমরা গ্রহণ করেছি। মরদেহ পোস্ট মর্টেমের পর বাকি কাজ করা হবে।
সোমবার সকাল ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাজনের মরদেহ সোহরাওয়ার্দীর মর্গে আছে বলে একটি সূত্র জানায়।
এদিকে রাজনের মামা সুজন কর্মকারের সঙ্গে সোমবার সকালে কয়েক দফা মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার তরফে সাড়া মেলেনি।
রোববার (১৭ মার্চ) ভোরে ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের বাসা থেকে রাজনকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় স্কয়ার হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রাজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার শ্যালিকা। এর কিছুক্ষণ পর আসেন তার স্ত্রী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তারা জানান, রাজনের আকস্মিক হার্ট অ্যাটাক (এমআই) হয়েছে।
অবশ্য রাজনের বেশ কয়েকজন সহকর্মী মরদেহের আংশিক স্থান দেখেছেন। তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক জাগরণকে বলেন, রাজনের বাঁ হাতের মাংসপেশিতে অস্বাভাবিক দাগ আছে, মুখমণ্ডলের বাঁ পাশেও এ ধরনের দাগ আছে।
বিএসএমএমইউর সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও ডেন্টাল বিভাগের অধ্যাপক আলী আসগড় মোড়ল বলেন, শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে লালমাটিয়ার আল মানার হাসপাতালে দীর্ঘ অপারেশন শেষে বাসায় ফেরেন রাজন। আমাদের চিকিৎসকরা আল মানারে গিয়ে কথা বলেছেন। রাতে রাজনের সঙ্গে যারা ছিলেন তারা জানিয়েছেন- রাজনের আচার-আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা ছিল না। স্বভাবসুলভ হাসিখুশি আচরণের মধ্য দিয়েই কাজ শেষ করে তিনি বিদায় নেন। আমরা মনে করছি, তার মৃত্যু অস্বাভাবিক। এটাকে বলা হচ্ছে নাকি এমআই (আকস্মিক হার্ট অ্যাটাক)। কিন্তু এ ধরনের কোনো বাহ্যিক লক্ষণ রাজনের মৃতদেহে দেখতে পাননি আমাদের সহকর্মী চিকিৎসকরা।
রাজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অষ্টম ব্যাচের (বিডিএস) ছাত্র। প্রায় ৩ বছর আগে কৃষ্ণা কাবেরীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৬ মার্চ কৃষ্ণা বিএসএমএমইউতে সার্জারি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। রাজন ও কৃষ্ণার মধ্যে পারিবারিক অশান্তি ছিল বলে রাজনের কয়েকজন বন্ধু ও সহকর্মী এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
এদিকে রোববার রাজনের মরদেহ আনার পর অসুস্থতার কারণে স্কয়ার হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি হন মন্ত্রী সাধন মজুমদার। দুপুরে রাজনের মামাকে কেবিনে ডেকে ঘটনাটি সমঝোতা করার চেষ্টা করেন মন্ত্রী। এতে রাজনের মামা অসম্মতি জ্ঞাপন করেন বলে ঘনিষ্ঠ সূত্রের বক্তব্য।
সূত্রটি জানায়, অসম্মতি জ্ঞাপনের পর রাজনের মামা বের হয়ে ভাগ্নের সহকর্মী চিকিৎসকদের কাছে আসেন। এ সময় বহিরাগত কিছু লোকজন স্কয়ারের সামনে আসেন রাজনের মরদেহ মরচুয়ারি থেকে নিয়ে দাহ করে ফেলতে।
খবর পেয়ে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে চিকিৎসকরা প্রতিবাদী হয়ে স্লোগান দেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বহিরাগতরা পিছু হঁটেন।
রাজনের ঘনিষ্ঠ একজন চিকিৎসক নেতা জানায়, পুরো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানানো হয়। সেখান থেকে নির্দেশনা আসে- রাজনের মরদেহের ময়না তদন্ত করতে হবে, থানায় অভিযোগ দিতে হবে। যদি অস্বাভাবিক কিছু হয়, তাহলে মামলা নিতে হবে। সে অনুযায়ী সবকিছু করা হচ্ছে।
বিএসএমএমইউর সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও ডেন্টাল বিভাগের অধ্যাপক আলী আসগড় মোড়ল রোববার সন্ধ্যায় দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমরা মৃত্যুর কারণটা সঠিকভাবে জানতে চাই। এটা আমাদের প্রধান দাবি।
রাজনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর মাইজদী উপজেলায়। তার বাবা-মা বার্ধক্যজনিত কারণে প্রায় শয্যাশায়ী। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে রাজন বড়।
ঢাকা ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক হুমায়ূন কবির বুলবুল দৈনিক জাগরণকে বলেন, রাজন অত্যন্ত মেধাবী চিকিৎসক। এই বয়সে তিনি যে পরিমাণ পড়াশোনা করে, দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে দক্ষ করেছেন, তা বিরল।
ইএনটি সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক নাজমুল হাসান বলেন, রাজকে হারিয়ে বিএসএমএমইউর ডেন্টাল সার্জারি বিভাগ অন্তত ১০ বছরের জন্য পিছিয়ে গেল।
অধ্যাপক হুমায়ূন কবির বুলবুল ও অধ্যাপক নাজমুল হাসান জানান, এক বছর আগে রাজন তার স্ত্রী দ্বারা মারাত্মক নির্যাতনের শিকার হয়ে আইসিইউতে ছিলেন। তারা দাবি করেন, এই মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply