
এমনও দিন যায় যেদিন মনিকার বাবা ঘরে ফেরেন না। ফিরলেও রাত কিংবা ভোর হয়। বাঁশের ঝাড়ু বিক্রি করেই চার সদস্যের সংসার চালান বাবা আব্দুল মান্নান। দুই মেয়ে মনিকা ও মিম। মনিকার বয়স ১৪ আর মিমের বয়স পাঁচ বছর।
মনিকার ওপর নজর পড়ে প্রতিবেশী মোহনের। সুযোগ বুঝে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় মোহন। পরে ধর্ষণ মামলায় জেলে যেতে হয় মোহনকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মোহনের বাবা জসিম ভাড়া করে খুনিদের।
গত বৃহস্পতিবার বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার পল্লীতে আফরোজা বেগম (৩০) নামের এক গৃহবধূকে ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি উপজেলার তালোড়া ইউনিয়নের বড়চাপড়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মান্নানের স্ত্রী।
পুলিশ জানায়, ধর্ষণে ব্যর্থ হওয়ার পর মোহনের বাবা প্রভাবশালী জসিম তার ছেলের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করে। কিন্তু মনিকার মা তাতে রাজি হয়নি। মনিকার বাবার মামলায় জসিমের ছেলে মোহনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মোহনের বয়স ১৬ হওয়ায় তাকে আদালতের নির্দেশে পাঠানো হয় যশোর কিশোর সংশোধনাগারে। এ কারণে জসিম ক্ষুব্ধ হয় মনিকার পরিবারের ওপর। তারাও বিষয়টি বুঝতে পেরে মনিকাকে পাঠিয়ে দেয় নানার বাড়িতে।
এদিকে, মনিকার মা আফরোজাকে খুনের পরিকল্পনা করে মোহনের বাবা জসিম। পরিকল্পনা অনুযায়ী একই গ্রামের বাচ্চু ওরফে পাইতা, আমিনুর ওরফে আনু এবং আতিকুরকে ভাড়া করে। মনিকার মা আফরোজাকে খুন করতে পারলে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দেয়ায় চুক্তি করে মোহনের বাবা জসিম।
মনিকার ধর্ষণের মামলার প্রধান সাক্ষী বাচ্চু ওরফে পাইতা। মনিকাদের বাড়িতে বাচ্চুর অবাধ যাতায়াত ছিল। তাকে বিশ্বাস করতেন মনিকার মা আফরোজা ও বাবা আব্দুল মান্নান। মান্নানের অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের দেখভাল করত বাচ্চু। কিন্তু এক লাখ টাকার লোভে জসিমের সঙ্গে হাত মেলায় বাচ্চু।
ঘটনার রাতে ঘরে ফেরেননি মনিকার বাবা মান্নান। পাশের গ্রামে ঝাড়ু তৈরির উপকরণ সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন। আফরোজা ছোট মেয়ে মিমকে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। রাত ১১টার পর মনিকাদের ঘরের দরজার টিন কেটে ভেতরে ঢুকে চারজন। এরপর আফরোজার পা শক্ত করে বাঁধে বাচ্চু, জসিম মাথা চেপে ধরে, আতিকুর মুখ চেপে ধরে, আর ধারালো ছুরি দিয়ে আফরোজাকে জবাই করে আমিনুর।
পরদিন সকালে ছোট মেয়ে মিম প্রতিবেশীদের ডেকে বলে তার মার গলা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তারা খবর দেয় পুলিশে। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। পাঁচ বছরের মেয়ে মিম ছাড়া আর কেউ ছিল না ঘটনার সাক্ষী।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply