
নাটোর শহরে স্কয়ার কোম্পানীর ওষুধ বিক্রি বন্ধ রেখেছে ওষুধের দোকান মালিকেরা। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগীর আত্মীয়-স্বজন। গতকাল বুধবার থেকে স্কয়ার কোম্পানীর সব ধরনের ওষুধ বিক্রি বন্ধ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায় কারও কাছে স্কয়ারের ওষুধ বিক্রি করছেন না কোন দোকান। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিচ্ছেন ওষুধ কোম্পানিদের বিক্রয় প্রতিনিধিদের সংগঠন (ফারিয়া), স্কয়ার কোম্পানীর প্রতিনিধি এবং নাটোর ড্রাগ এন্ড কেমিষ্ট এসোসিয়েশন। বৃহস্পতিবার নাটোর শহরের নিচাবাজার, মাদ্রাসা মোড়, স্টেশন বাজার, হাসপাতাল গেট ঘুরে দেখা যায়, রোগী বা রোগীর লোকজন ওষুধ কিনতে আসলে যদি সেটা স্কয়ার কোম্পানীর ওষুধ হয়ে থাকে তাহলে তারা ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
এব্যাপারে নাটোর ড্রাগ এন্ড কেমিষ্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বেন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ঘটনা তেমন কিছু না। স্কয়ার কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিদের ব্যবহার খুব খারাপ। প্রতিটি দোকানে গিয়ে তারা খারাপ ব্যবহার করে। বারবার তাদের কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে কোন কাজ হয়নি। এরপর আমাদের সমিতির সকলের মতামত নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক গতকাল থেকে সারা শহরে আমরা স্কয়ারের সকল ধরনের ওষুধ বিক্রয় বন্ধ রেখেছি। এতে করে তো রোগীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে বেন্টু বলেন, এখন বাংলাদেশে প্রতিটি ওষুধের বিকল্প রয়েছে। স্কয়ারের এমন কোন ওষুধ নেই যা অন্য কোম্পানীগুলো তৈরী করে না। বরং স্কয়ারের ওষুধের চেয়ে অন্য কোম্পানীর ওষুধের মান ভাল রয়েছে এমন কিছু ওষুধও আছে। বেন্টু উদাহরণ দিয়ে আরও বলেন, কিছুদিন আগে গ্যালোক্স নামের একটি কোম্পানী দেশ থেকে ব্যবসা উঠিয়ে চলে গেছে তাতে কি কোন সমস্যা হচ্ছে কারও, হচ্ছে না। আমরা স্কয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা প্রতিনিধি পাঠাতে চেয়েছে হয়ত দুই একদিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
এব্যাপারে স্কয়ার ফার্মার নাটোর জোনের টেরিটোরি ম্যানেজার তাপস কুমার ভট্টাচার্য কাছে জানান, মূলত এটি ওষুধ ডেলিভারী নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে। তবে আমরা কথা বলেছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। ড্রাগ এসোসিয়েশনের অভিযোগের ব্যাপারে তাপস বলেন, আমরা কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি না। তবে ডেলিভারী ম্যান করতে পারে। আর শহরের বাইরে আমাদের ওষুধ বিক্রয় হচ্ছে, সেখান থেকে ক্রেতারা সংগ্রহ করতে পরবেন বলে জানান তাপস।
এই সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টেটিভ এসোসিয়েশন(ফারিয়া) এর নাটোর শাখার সভাপতি আব্দুল্লাহিল বাকী, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন ঘটনা কাম্য নয়। ঘটনার কারণ গুলো অদৃশ্য। ড্রাগ এসোসিয়েশনের সিদ্ধান্তের পর আমি নিজেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি কিন্তু তারা ফারিয়ার সঙ্গে এব্যাপারে বসতে চায়নি। আর তারা যদি স্কয়ারের প্রতিনিধিদের ব্যবহারের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে আমি মনে করি এটি ঠিক হয়নি।
এবিষয়টি বসে ঠিক করে নেয়া যেত। যে সকল প্রতিনিধি খারাপ ব্যবহার করেছে তাদের কোম্পানী নাটোর থেকে সরিয়ে নিতে পারে কিন্তু তাদের এই সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের।যদিও বিকল্প ওষুধ রয়েছে কিন্তু ওষুধের বিষয়টি পুরোপুরি মনস্তাত্তিক। কোন লোক যদি দীর্ঘদিন একটি নির্দিষ্ট কোম্পানীর ওষুধ খেয়ে থাকে, তাকে হঠাৎ করে অন্য কোম্পানীর ওষুধ দিলে তিনি নিতে চাইবেন না। এরপর তো তারা অন্য কোম্পানীর সঙ্গেও এমন করতে পারে। এই বিষয়টি সমাধান হওয়া জরুরী।
মো: জামশেদ আলী নামের আরেক ওষুধ ক্রেতা জানান তিনি সকাল থেকে বিভিন্ন দোকানে ঘুরেছেন কিন্তু কেউ তার কাছে ওষুধ বিক্রি করেনি, কারণ তার প্রয়োজনীয় ওষুধটি স্কয়ার কোম্পানীর।
নাটোরের সিভিল সার্জন ডা: আজিজুল ইসলাম জানান, এটি আমার অফিসের আওতার মধ্যে পড়ে না। আমার কিছু করার নেই। এমন ঘটনার কথা আমার জানাও নেই। এটি ওষুধ প্রশাসনের দায়িত্ব। নাটোরের ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক মাকনুন তাবাসুমের মুঠো ফোনে বার বার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে শহরের মাদ্রাসা মোড়ের একটি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দুইজন মহিলা এসেছেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের ক্যামলোডিন প্লাস নামের ওষুধ নিতে কিন্তু দোকান মালিক জানান এই ওষুধ বিক্রয় বন্ধ আছে। কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, আমাদের সমিতির নির্দেশনা আছে স্কয়ারের ওষুধ বিক্রি করা যাবে না।
বিক্রি করলে শাস্তি হিসেবে তিন দিন দোকান বন্ধ রাখতে হবে। আমরা ছোট দোকানদার আমাদের কিছু করার নাই। নাটোরে ওষুধ সংশ্লিষ্ট সমস্যা নতুন নয় বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে ছোট খাট সমস্যা। ওষুধের দোকান গুলো সম্প্রতি সিদ্ধান নেয় তারা শতকরা পাঁচ পারসেন্ট ছাড় দেবেন। ক্রেতাদের সঙ্গেও ওষুধের দোকানগুলো খারাপ ব্যবহার করে এমন অভিযোগ প্রায় শোনা যায়। নিজেদের ইচ্ছামত দাম নির্ধারণ করে, রোগীদের চাহিদা মত কোম্পানীর ওষুধ না থাকলে অন্য কোম্পানীর ওষুধ গছিয়ে দেওয়া।
এছাড়া নাটোর শহরের কোন ওষুধের দোকান কখনই কোন ক্রেতাকে বিক্রয় রশিদ দেয় না। এই বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ কোন দোকান মালিক। কর্তৃপক্ষের দিক থেকেও কোন নজরদারি নেই। নাটোরের সাধারণ মানুষ এই ওষুধ চক্র থেকে মুক্তি চাই। সমস্যা সমাধানের জন্য সকলে চিন্তাই থাকলেও কোন সমাধান হচ্ছে না।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply