
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৩টি আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তাকে দল থেকে তিনটি আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
সোমবার বিকেলে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে খালেদা জিয়াকে তিনটি মনোনয়ন চিঠি ইস্যু করা হয়।
প্রথমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের কাছ থেকে বগুড়া-৬ আসনে খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন চিঠি গ্রহণ করেন ভিপি সাইফুল ইসলাম।
এরপর বগুড়া-৭ আসনে তার জন্য আরেকটি মনোনয়ন চিঠি গ্রহণ করেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান লালু। পরে ফেনী-১ আসনেও তাকে মনোনয়ন চিঠি দেয়া হয়।
বিএনপি কৌশলগত কারণে এবার প্রায় সব আসনেই একাধিক প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে রাখছে। কোনো কোনো আসনে তিনজনকেও মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে।
তেমনি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আসনেও একাধিক বিকল্প প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে। দল সূত্রে জানা গেছে, দুটি দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ায়, বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে।
এর মধ্যে বগুড়া-৬ (সদর উপজেলা ও পৌরসভা) আসনে কোনো কারণে খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে না পারলে বিকল্প হিসেবে পৌরসভার মেয়র একেএম মাহবুবর রহমান ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাকেও মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে।
বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাজাহানপুর) আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। এবারও তাকে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
কিন্তু, কোনো কারণে খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে না পারলে তার বিকল্প হিসেবে এখানে গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটন এবং গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিনুর ইসলাম তালুকদারকে মনোনয়ন দিয়ে রাখা হয়েছে।
এই আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২ লাখ ৩২ হাজার ৭৬১ ভোট পেয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তার নিকটতম মহাজোটের (জাতীয় পার্টি) প্রার্থী মোহাম্মদ আলতাফ আলী লাঙল প্রতীকে ৯২ হাজার ৮৩৩ ভোট পান।
একইভাবে ফেনী-১ (পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলা) আসনেও বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে না পারলে এখানে ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে মনোনয়ন দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
যদিও এখন পর্যন্ত তাকে এই আসনে দলীয় মনোনয়নের চিঠি ইস্যু করা হয়নি। তবে সোমবার প্রথম দিনে আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে ফেনী-৩ (সোনাগাজী ও দাগনভূঁইয়া উপজেলা) আসনের মনোনয়ন চিঠি ইস্যু করা হয়।
এদিকে খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজন নেতা যে এবার নির্বাচন করতে পারছেন না তা সোমবারের হাইকোর্টের একটি রায়ে আরো স্পষ্ট হয়েছে।
এছাড়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আপিলে খালাস পেলেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। নির্বাচনে অংশ নিতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্তির পরও পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল এ মন্তব্য করেন।
এর আগে দুর্নীতির মামলায় সাজা স্থগিত চেয়ে বিএনপির পাঁচ নেতার করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির পাঁচ নেতা হলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউলাহ আমান, বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূঁইয়া, সাবেক সংসদ সদস্য ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ মো. মশিউর রহমান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আব্দুল ওহাব।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, আপিল পেন্ডিং অবস্থায় সাজা স্থগিতের বিধান নেই। ফলে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
তফসিল অনুসারে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ২৮ নভেম্বর, ২ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন নির্ধারিত রয়েছে ৯ ডিসেম্বর।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply