
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার ৩ নং হোসেনগাও ও ৪ নং লেহেম্বা ইউনিয়নের মানুষের নদী পারাপারের ভরসা এখন বাঁশের সাঁকো। এই দুই ইউনিয়নে রয়েছে ১০টি গ্রাম। মাঝে রয়েছে কুলিক নদী। কিন্তু এ নদীতে সেতু না থাকায় দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন প্রায় দুই লাখ মানুষ।
ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার রাউৎনগর-ব্রহ্মপুর এলাকাটি কুলিক নদীর কারণে দুইভাগে বিভক্ত। স্থানীয় মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্য এরশাদের আমলে ১৯৮৬-৮৭ অর্থ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কুলিক নদীর উপর একটি স্লুইস গেইট-কাম সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ওই নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কিছু দিনের মধ্যে ১৯৮৮ সালের বন্যায় সেতুটি ভেঙে যায়। পানিতে ভেসে যায় সেতুর উভয় পাড়ের সংযোগ সড়ক।
এখন সেতুটির অবকাঠামো মাঝ নদীতে পড়ে আছে। ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত এ সেতুটি এখন এলাকার মানুষের কোনো কাজে আসছে না। বন্যায় সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় এলাকার মানুষ চলাচলের সুবিধায় নদীতে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে পারাপার হচ্ছেন। শামসুল হক নামে এক ব্যক্তি এখানে সাঁকো মেরামত ও দেখভাল করে আসছেন।
তিনি জানান, ৩নং হোসেনগাঁও ও ৪নং লেহেম্বা ইউনিয়নের শতশত মানুষ প্রতিদিন এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদীর পশ্চিম পাশের বাজার রাউৎনগর বাজারসহ রাউৎনগর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে যাতায়াত করে থাকে। নদীর পূর্বপাড়ে বসতপুর, ব্রহ্মপুর, লেহেম্বা, শ্যামাডাঙ্গী, রওশনপুর, বিরাশি, শালবাড়ী, কোচল, মমরেজপুর, চাপোড় পার্ব্বতীপুর, বাঁশবাড়ী গ্রামের বাসিন্দাদের নদীর পশ্চিম পাড়ের রাউতনগর বাজারে আসতে হলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
রসুনপুর গ্রামের কলেজ ছাত্র শাহিরুল ইসলাম জানান, সাঁকোর উপর দিয়ে সাইকেল, মোটর সাইকেল, রিকশা-ভ্যান পারাপার করা গেলেও ধান-পাট-গম বিক্রি করতে হাটে নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে ভ্যানে করে পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয় রাউৎনগর বাজারে। অথচ নদীতে একটি সেতু থাকলে এক কিলোমিটার পার হয়েই বাজারে যাওয়া যেত।
ব্রক্ষপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসান আলী জানান, বর্ষাকালে নদীতে পানি ভরাট হয়ে যায়। তখন সাঁকো পানির নিচে তলিয়ে যায়। ওই সময় নৌকায় হলো এলাকার মানুষের একমাত্র ভরসা। সে সময় পূর্বপাশের স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীদের স্কুল বা কলেজে যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
রাউৎনগর উচ্চ বিদ্যলয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী বৃষ্টি আকতার জানান, বর্ষাকালে আমাদেরকে দুটি করে ড্রেস নিয়ে স্কুলে আসতে হয়। একটি পরে আমরা নদী পার হই। আরেকটি পরে স্কুলে যাই।
তোজাম্মেল হক নামে একজন পথচারী জানান, নদীর পূর্বপাশের আমাদের ১০ গ্রামের কোনো মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসবের ব্যথা উঠলে তাকে হাসপাতালে নিতে ১০ কিলোমিটার অতিরিক্ত রাস্তা ঘুরে হাসপাতালে যেতে হয়। অথচ এখানে একটি সেতু থাকলে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা কম হত। আমরা অল্প সময়ে হাসপাতালে যতে পারতাম।
কৃষক আজগর আলী জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবের কারণে আমরা একসঙ্গে ৫/১০ মণ ধান, গম, পাটসহ বিভিন্ন সবজি বাজারে নিতে পারি না। বেশি পরিমাণে ধান গম বিক্রি করতে হলে আমাদের পাঁচ মাইল অতিরিক্ত রাস্তা পাড়ি দিতে হয়।
রহিম উদ্দীন জানান, প্রতিবার ইউনিয়ন পরিষদ ও সংসদ নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ভোট শেষে তারা সবকিছু ভুলে যান। ফলে ৩০ বছর ধরে এ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ শেষ হয়নি।
হোসেনগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুব আলম জানান, রাউৎনগর এলাকায় কুলিক নদীতে সেতু নির্মাণের জন্য অনেকবার উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় প্রস্তাব তুলেছি। সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এলজিইডিকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়। মাপা-মাপিও করা হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণ হয় না।
এ ব্যাপারে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী কান্তেশ্বর বর্মন জানান, রাউৎনগর ও বিরাশিবাজার এলাকায় কুলিক নদীতে একটি সেতু নির্মাণের দাবি এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের। এমধ্যে বিগত সময়ের এমপি মহোদয়গণ একাধিকবার সংসদেও প্রস্তাব তোলেন। আমরা যতটুকু জানি বিষয়টি অগ্রাধিকার তালিকায় আছে। অনুমোদন পেলে এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply