
গত সপ্তাহের রোববার থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। কোমলমতি এই শিক্ষার্থীরা মাত্র পাঁচ দিনে দেখিয়ে দিয়েছেন চাইলে সবকিছু নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলতে পারে।
ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা, অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে তারা প্রমাণ করেছে পুলিশ চায় না তাই হয় না। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) ধুম পড়েছে লাইসেন্স-ফিটনেস সনদের জন্য। পুলিশ না পারলেও শিক্ষার্থীরা ঠিকই টনক নড়িয়েছে সবার।
লাইসেন্সবিহীন চালক ও গাড়ি সড়কে নয়, ছাত্রদের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভিড় বেড়েছে বিআরটিএ-তে। সংস্থাটি জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন শুরুর পর থেকেই ভিড় বেড়েছে। আর গত দু’তিন দিনে প্রতিদিন লাইসেন্সসহ বিভিন্ন বৈধ ডকুমেন্ট তৈরির আবেদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
সরেজমিনে বিআরটিএ সার্কেল-১ কার্যালয়, মিরপুরে গিয়ে দেখা যায় উপচেপড়া ভিড়। গাড়ি আর লোকজনের সমাগমে স্বস্তিতে দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই। প্রাইভেটকারের লাইনের লেজ গিয়ে ঠেকেছে পুলিশ কনভেনশন সেন্টারের সামনে। আর ভেতরে মোটরসাইকেলসহ অন্য গাড়ির জন্য চলাচল করাই কষ্টসাধ্য।
আগতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাইভেটকারের বেশির ভাগই এসেছে ফিটনেস সার্টিফিকেট আর মালিকানা পরিবর্তনের জন্য। অনেকেই এসেছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স, কেউবা ডিজিটাল নম্বর প্লেট, ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন কার্ড করতে। অনেকেই এসেছেন লার্নার কার্ডের জন্য। প্রতিটি বুথেই ভিড় লক্ষ্যণীয়। সকাল থেকেই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ সারছেন আগতরা। হঠাৎ বাড়তি লোকের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিআরটিএ।
সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মাসুদ আলম বলেন, আমরা স্পেশাল ড্রাইভ দিচ্ছি। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরুর পর থেকে আমাদের পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। সব মিলিয়ে গত তিনদিনে ব্যাপক আবেদন পড়ছে।
সহকারী পরিচালক আলী আহসান মিলন বলেন, আগে প্রতিদিন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য গড়ে ১১০টির মতো আবেদন পড়তো। এখন প্রতিদিন পড়ছে ২৩০টির মতো। নবায়নের জন্য আগে ৫০টি আবেদন পড়তো, এখন পড়ছে ৯০টির বেশি। ফিটনেস সনদ নিতে আগে প্রতিদিন আবেদন পড়তো ৯শ। এখন পড়ছে ১ হাজার ৪শ।
এছাড়া মালিকানা পরিবর্তন, ডিজিটাল নম্বর প্লেট, ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি কাজেও আবেদন বেড়েছে। এটি একটি বিরাট সাফল্য। তবে এই চাপ সামলানোর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল নেই। আগের লোকবল দিয়ে সব সামলানো হচ্ছে।
এটাকে সাফল্য দেখলেও বিআরটিএ ভোগান্তির অপর নাম- এমনটাই বলছেন আগতরা। তাদের বক্তব্য, এখানে কোনো কাজই সময়মতো হয় না। ছোটখাটো ভুল বা তুচ্ছ কারণে দিনের পর দিন এখানে ঘুরতে হয়। মূলত এসব কারণেই অনেকেই বৈধ কাগজপত্র করতে চান না।
অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মাসুদ আলম বলেন, বৈধ কাগজ-পত্র নিয়ে সড়কে যানবাহন চালানোই তো নিয়ম। এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স করা মানে সেটা তো একটি কাগজ নয়। পরীক্ষার মধ্য দিয়ে লাইসেন্স নিতে হয়।
কাজেই এখানে সড়কের নিয়ম মানার একটা শিক্ষার বিষয় থাকে। তাই এটা করাটা জরুরি। ভোগান্তি যা হচ্ছে এটা লোকবলের অভাবের কারণে। আমরা আন্তরিকতা নিয়েই কাজ করছি। কোনো অনিয়মের অভিযোগ থাকলে আমাদের জানালে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।
শিক্ষার্থীরা চলমান আন্দোলনে জনসাধারণের সঙ্গে বাজে আচরণ না করেও যে শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায় তা দেখিয়ে দিয়েছে। গত সাতদিনে প্রায় সবাই গাড়ি নিয়ে বেরুলে সঙ্গে রেখেছেন বৈধ কাগজপত্র। কেউ বৈধ কাগজ না রাখায় তাদের কাছে লজ্জায় পড়ে পরের দিন আর কাগজ ছাড়া বের হননি, এমন নজির রয়েছে অনেক।
শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রশাসনের সহ সকল জনসাধারনের টুক নাড়িয়ে দিয়ে গেলো। তারা দেখিয়ে দিলো চাইলেই সব সম্ভব। এদের হাতে যেদিন দেশ যাবে, সেদিন নিষচয়ই পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এম ইউ
Leave a Reply