
বাগেরহাটের শরণখোলার আমড়াগাছিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বর্জন করে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ, ঝাঁড়ু মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। এ সময় অভিভাবকসহ শত শত শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে অংশ নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহফুজুর রহমান প্রিন্সের বহিস্কার দাবি করেন।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। বেলা ১২টার দিকে পুলিশ ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটি সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা তাদের অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি তুলে নেয়।
বাগেরহাটের ঝাঁড়ু মিছিলে অংশ নিয়েছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা
পরিস্থিতি শান্ত করতে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত এবং ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সাইয়েদুর রহমানের ছেলে ওই বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক মাহফুজুর রহমান প্রিন্স গত সোমবার দুপুরে এক কলেজ ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়েন। একই গ্রামের রাসেল খানের বাড়ি থেকে স্থানীয় এলাকাবাসী তাকে ধরে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে শরণখোলা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষক প্রিন্সকে জনতার রোষানল থেকে উদ্ধার করে কলেজ ছাত্রীসহ তাকে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় মেয়ে
পক্ষের কোনো অভিযোগ না থাকায় পরে প্রিন্সকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু এ ঘটনায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় সাধারণ মানুষ চরম ক্ষুব্ধ হয়। তাদের দাবি চরিত্রহীন কোনো ব্যক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকতে পারেনা। এ কারণে ঘটনার পরের দিন সকাল থেকে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সবাই। ওই শিক্ষকের বহিষ্কারসহ সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানায় তারা। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে এর আগে ওই শিক্ষককে আরও দু’বার বহিষ্কার করা হয়েছিল বলে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন।
গণধোলাইয়ের শিকার শরণখোলার আমড়াগাছিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহফুজুর রহমান
ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিয়া আক্তার, হাবিবা আক্তর, অর্পিতা রাণী, সোলায়ান হোসেন, সপ্তম শ্রেণির মুন আক্তার, সাদিয়া আক্তার, সাব্বির ফরাজীসহ বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীরা জানায়, মাহফুজুর রহমান প্রিন্স একজন চরিত্রহীন লোক। তার কাছে কেউ নিরাপদ নয়। তার মতো শিক্ষক থাকলে বিদ্যালযের পরিবেশ নষ্ট হবে। তার এমন কর্মাকান্ডের বিচার ও স্থায়ী বহিষ্কারে দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ ঝাঁড়ু হাতে নিয়ে আমড়াগাছিয়া বাজারের সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করে ওই শিক্ষকের বহিষ্কার দাবি করে বিক্ষোভ করতে থাকে।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক সুরাইয়া পারভিন, রুহুল আমীন মাসুদ, সীমা বেগম, নজরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, শিক্ষক প্রিন্সের স্ত্রী-সন্তান থাকতেও এভাবে একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে পার পেয়ে যাওয়ায় সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে অভিভাবকদের চিন্তায় থাকতে হয়। তার মতো শিক্ষক বিদ্যালয়ে থাকলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আমরা নিরাপদ বোধ করবোনা। আমরা তার বিচার দাবি করি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সরোয়ার হোসেন খান বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. সহিদ হোসেন বাবুল বলেন, মাহফুজুর রহমান প্রিন্সকে একই অভিযোগে এর আগে আরও দু’বার বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অভিযোগকারীরা তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করায় তিনি আবার পুনর্বহাল হন। তার বিরুদ্ধে শক্ত কোনো অভিযোগকারী না পাওয়া তিনি বার বার পার পেয়ে যাচ্ছেন। এবার তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার সরকার বলেন, আন্দোলকারীদের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে তার কর্মসূচি প্রত্যারহার করে। সোমবার দুপুরে শিক্ষককে মারধরের খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। কিন্তু কেউ অভিযোগ না করায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিংকন বিশ্বাস বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিধিগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষার পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় সে বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ শতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে।
তবে, অভিযুক্ত শিক্ষক মাহফুজুর রহমান প্রিন্স জানান, ওই কলেজ ছাত্রী তার বিবাহিত স্ত্রী। কিছুদিন আগে তারা রেজিস্ট্রি করে নয়, কালিমা পড়ে বিয়ে করেছেন। তিনি তার এই দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন। এ সময় তার শত্রুপক্ষ তার ওপর অহেতুক হামলা চালায়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply