
টানা চার বছরের সংস্কারকাজ শেষে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর খুলে দেয়া হচ্ছে ৫৩ বছরের পুরনো হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। সম্পূর্ণ নতুন রূপে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে শেরাটন হোটেল নামে বহুলপরিচিত এ হোটেলটি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ তারকা এ হোটেলের উদ্বোধন করবেন। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাসংবলিত সুসজ্জিত সরকারি মালিকানাধীন এ হোটেল রণাবেণের দায়িত্বে থাকবে বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিএসএল)।
২০১৪ সালে বন্ধ হওয়া রূপসী বাংলা হোটেলে কক্ষ ছিল ছোট-বড় মিলিয়ে ২৭২টি। সংস্কারের পর করে সংখ্যা কমে ২৩১টিতে দাঁড়িয়েছে। আয়তনের দিক থেকে করে আকার দাঁড়িয়েছে ২৬ থেকে ৪০ স্কয়ার মিটার।
বিশ্বমানের অতিথি সেবা নিশ্চিত করতে পুরোনো পাইপ, তার ও ফিটিংসহ প্রয়োজনীয় সব সংস্কার করা হয়েছে। পরিবর্তন করা হয়েছে সুইমিং পুল ও ডাইনিং হলের স্থান। এর আগে হোটেলটির বলরুম ছিল একদিকে, উইন্টার গার্ডেন নামে সবচেয়ে বড় হলরুমের অবস্থান ছিল আরেক দিকে।
এখন দুটি এক করে দেয়া হয়েছে। হোটেলটির মূল ফটকও সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ভেতরের সুইমিং পুলটিও স্থানান্তর করে সাজানো হয়েছে নতুন করে। গ্রাহকদের চাহিদার কথা মাথায় নিয়ে বাড়ানো হয়েছে সুযোগ-সুবিধা।
নতুন করে চালু করার জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা বাংলাদেশ সার্ভিস লিমিটেড (বিএসএল) ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল গ্রুপের মধ্যে ৩০ বছরের চুক্তি হয়েছে।
শেরাটন হোটেলের সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় হোটেলটিকে নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। হোটেলটিতে অবস্থান করে যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করেছিলেন বিদেশী সাংবাদিকরা।
বিএসএল’র সার্বিক ব্যবস্থাপনায় চার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হোটেলটিতে চার শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে পরিচালিত সংস্কারের কার্যক্রম এখন প্রায় শেষ। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাঝা।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রূপসী বাংলা হোটেল ছিল বরাবরই লাভজনক। যখন যে কর্তৃপক্ষ হোটেলটি পরিচালনা করেছে, লাভ করেছে সবাই। রূপসী বাংলা নামে ২০১১ সালে ৪০ কোটি, ২০১২ সালে ৪৭ কোটি ও ২০১৩ সালে ১৯ কোটি টাকা মুনাফা করে প্রতিষ্ঠানটি। বাড়তি মুনাফার আশায় উদ্যোগ নেয়া হয় সংস্কারের।
এরই মধ্যে চুক্তি হয় নতুন কর্তৃপক্ষের সাথে। যদিও এক বছরের সংস্কারকাজ সম্পন্ন করতে পাঁচ বছর লাগায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। সুপারিশ করা হয় দায়ীদের উপযুক্ত শান্তি নিশ্চিত করার।
১৯৬৬ থেকে ২০১৮ ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৬ সালে। ওই সময় এটিই ছিল দেশের প্রথম আন্তর্জাতিকমানের পাঁচতারকা হোটেল। ইন্টারকন্টিনেন্টাল নামেই চলে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত।
এরপর স্টারউড কোম্পানির সাথে চুক্তি হওয়ায় ১৯৮৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ঢাকা শেরাটন হোটেল নামে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলে। শেরাটনের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ‘রূপসী বাংলা হোটেল’ নামে এটি পরিচালিত হয়।
২০১৩ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল গ্রুপের (আইএইচজি) সাথে বিএসএলের চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তির আওতায় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সংস্কারের জন্য হোটেলটি বন্ধ রাখা হয় এবং চার বছর চলে সংস্কারকাজ।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের এবং সবচেয়ে সুসজ্জিত হোটেল এই হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। এর পেছনে রয়েছে বহু বছরের ইতিহাসও। হোটেলটির সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষন তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এম ইউ
Leave a Reply