
চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা সৈকতে পড়ে থাকা সেই স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল রবিবার আদালতে হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্তকারী কর্মকর্তা দাবি করেছেন, তাসফিয়া আমিন পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মামলার তদন্ত পর্যায়ে হত্যার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনসহ পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে তদন্তকারী কর্মকর্তা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক স্বপন কুমার সরকার। চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী জানান, তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর হাকিম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, তাসফিয়াকে হত্যা করা হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ তিনি পাননি।
আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা এ হত্যা মামলার তদন্ত পর্যায়ে তদন্তের সব দিক বিশদভাবে তদন্ত করেছেন। মরদেহ উদ্ধার পরবর্তী তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাসফিয়ার ফুসফুসে পানি ছিল। এতে বোঝা যায় পানিতে ডুবে তাসফিয়ার মৃত্যু হয়েছে।’
আত্মহত্যা করতে গোলপাহাড় এলাকা থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা কেন যেতে হবে?-এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাসফিয়া কীভাবে কেন পতেঙ্গা চলে গিয়েছিল, সেটা জানা সম্ভব হয়নি।’
তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আরো বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তাসফিয়াকে পতেঙ্গায় দেখেছেন। পাথরে হাঁটাচলা করতেও দেখেছেন। রাতের অন্ধকারে পানিতে ঝাঁপ দেওয়ার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন। তাই সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে।’
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, ‘তাসফিয়াকে ধর্ষণ করা হয়েছে এমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। বিষপানের আলামতও পাওয়া যায়নি। তবে ফুসফুসে পানি পাওয়া গেছে। পানিতে ডুবে মারা গেলেই ফুসফুসে পানি পাওয়া যায়।’
উল্লেখ্য, নগরীর সানসাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল তাসফিয়া। ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে নগরীর আরেকটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আদনানের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় বলে পরিবারের ভাষ্য।
গত ১ মে দুপুরে বন্ধু আদনান মির্জার সঙ্গে নগরীতে ঘুরতে বের হয়েছিল তাসফিয়া। সার্সন রোডে ওয়ার সিমেট্রিতে ঘুরে গোলপাহাড় এলাকায় চায়না গ্রিল নামে একটি রেস্টুরেন্ট যান। রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার করে বসে তারা কথা বলছিল। এরই মধ্যে আদনানের বন্ধু আসিফ মিজানের মোবাইলে ফোন করেন তাসফিয়ার মা। এ সময় তিনি তাসফিয়াকে দ্রুত বাসায় যেতে বলেন। এর পর নাস্তা না করেই তাসফিয়া দ্রুত রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে একটি অটোরিকশায় উঠে বাসায় যাওয়ার জন্য। কিন্তু তাসফিয়া বাসায় যায়নি। পরদিন ২ মে সকালে তাসফিয়ার মরদেহ পাওয়া যায় পতেঙ্গা সৈকতে।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার ডেইলপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনের মেয়ে তাসফিয়া ছিলেন সানসাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার ছেলেবন্ধুও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থী।
তাসফিয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর তার বাবা মো. আমিন আদনানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন এবং তাসফিয়াকে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন। কিন্তু তদন্তের পর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে পুলিশ বলছে, তাসফিয়াকে গণধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এরপর আদনান মির্জাসহ অন্য আসামিদের মুক্তিতে আর বাধা থাকছে না।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply