
গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পরিবার সমন্বয় পরিষদ থেকে মুক্তিযোদ্ধা-জনতা সংহতি সমাবেশ আয়োজন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার প্রতিবাদে এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের স্থায়ী অধিকার সংরক্ষণ আইনের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ।যারা পাকিস্তানের চিন্তা-চেতনাকে লালন করে দিন কাটায় এবং নিজেদের রাজাকার মনে করে, তাদের টিকিট কেটে পাকিস্তানে চলে যেতে বলেন তুরিন আফরোজ। ওই সব পাকিস্তানপ্রেমীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের পূর্বপুরুষরা সেখানে ফুলের মালা দিয়ে গ্রহণ করবে। বাংলাদেশে বসে থাকবেন, বাংলাদেশের বায়ুতে শ্বাস-প্রশ্বাস নেবেন; কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করবেন, এত বড় সাহস আপনারা কোথায় পান?
ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ আরো বলেন, ‘মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়েসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি রয়েছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তানরা কোটা চাই না, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাই।’
সভায় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে ড. তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, আমি আপনাদের দেখেছি। আপনারাই আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধ। আপনারাই আমার কাছে ১৯৭১। যেভাবে ১৯৭১ সালে আপনারা গর্জে উঠেছিলেন, তেমনি আবারও গর্জে উঠুন। আজকে আবারও যদি একটি যুদ্ধের প্রয়োজন হয়, হাতে হাতে অস্ত্র তুলে নিন। আপনাদের নেতৃত্বে নতুন প্রজন্ম সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। আমরা বর্তমানে অনেক বড় কিছু হয়েছি। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছি; কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা যদি সেদিন যুদ্ধ না করতেন, তাহলে বড়জোর ওই পশ্চিম পাকিস্তানের কেরানি পদ পেতাম।’
সমাবেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটার প্রয়োজন নেই। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা যথেষ্ট মেধাবী। আমরা মেধা দিয়েই ২০তম বিসিএসে দ্বিতীয় হয়েছি। কোটা সংস্কারের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করার অধিকার কারো নেই। মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন বলেই আজ আমাদের সন্তানরা বিসিএস ক্যাডার হতে পারছে।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়ে যেন বেঁচে গেছেন, না হলে তাঁকেও এই অপমান সহ্য করতে হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলায় স্বাধীনতাবিরোধীদের থাকার কোনো অধিকার নেই।
ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্যুত করার অপচেষ্টা চলছে। নতুন প্রজন্মকে ভুল তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি দাঁড় করানো চেষ্টা চলছে।
সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পরিবার সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের দাবি উত্থাপন করেন কাজী রাজিশ ইমরান। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, নওশাদ মাহমুদ রানা, শামীমা হারুন লুবনা, মাহবুবুর রহমান শিবলী, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, হেলাল উদ্দিন, মো. সেলিম উদ্দিন, সরফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী রাজু, দীপংকর চৌধুরী কাজল প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের জন্যে একটি গৌরময় ইতিহাস। কোনো অপশক্তি যেন একে ভিন্ন খাতে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে সচেষ্ট থাকতে হবে সকলকেই।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply