
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের শোক প্রস্তাব আনা হবে। আসন্ন সংসদ অধিবেশনে শোক প্রস্তাবটি আনার পর তার জীবনী নিয়ে আলোচনা হবে। এজন্য একটি শোক প্রস্তাব তৈরি করেছে সংসদ। শোক প্রস্তাবে তাকে কবি হিসেবে উল্লেখ তার রচিত ১০টি বই প্রকাশিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
তার ওই খসড়া শোক প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মকবুল হোসেন এবং মাতা মাজিদা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম বেগম রওশন এরশাদ। রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষায় ১ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনা প্রধান ছিলেন এবং ১৯৮১-১৯৯০ সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় দেশি-বিদেশি বহু প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনা প্রধান এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন বিষয়ে পুস্কার প্রাপ্ত হন। তিনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘ পুরস্কার লাভ করেন। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তন করেন।
এই রাজনীতিবিদ ৫ম, ৭ম, ৯ম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে মোট ৪ বার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নবম জাতীয় সংসদে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং কার্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে তিনি রংপুর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সংসদে তিনি কার্য-উপদেষ্টা কমিটি, কার্যপ্রণালী বিধি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং পিটিশন কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তাছাড়া, তিনি মন্ত্রী পদমর্যাদায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইংরেজী, আরবি এবং উর্দু ভাষায় পারদর্শী। তিনি সেনা প্রধান, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ সফল করছেন।
তিনি ১০টারও বেশি কবিতার বই প্রকাশ করেন। তার উল্লেখযোগ্য পুস্তক ও প্রকাশনা হলো- কনক প্রদীপ জ্বালো, এক পৃথিবী আগামী কালের জন্য, নির্বাচিত কবিতা, নবান্নে সুখের ঘ্রাণ, যুদ্ধ এবং অন্যান্য কবিতা, যেখানে বর্ণমালা জ্বলে, ইতিহাসে মাটির চেনা চিত্র, কারাগারে নিঃসঙ্গ দিনগুলো, দেশ ও দশের কথা বলছি, জীবন সন্ধ্যাতারা, এরশাদের কবিতা সমগ্র, Lonely days in prison, A Soldier Speaks, Proposal for Reform of Election in Bangladesh, What I did and what I want to do.. এছাড়া তার ‘আমার কর্ম আমার জীবন’ শীর্ষক আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি তিন পুত্র সন্তান ও এ কন্যা সন্তানের জনক। পেপার ক্লিপিংস, গার্ডেনিং, বই পড়া ও গলফ খেলা তার শখ। শোক প্রস্তাবে আরো উল্লেখ করা হবে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘ পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
৮৯ বছর বয়সী সাবেক সেনাশাসক ও পাঁচবারের সাংসদ এরশাদ দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। গত ২৬ জুন শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। গত ৪ জুলাই থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ১৪ জুলাই তিনি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় সংসদ অধিবেশন শুরুর দিন তার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব আনার পর রীতি অনুযায়ী অধিবেশন মুলতবি করা হবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply