
১৯৭১ সালের যে জায়গাটি তে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন,একই স্থানে ৪৭ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ আবারও ভাষণ দিলেন। ১৯৭১ সালে দেশ কে মুক্ত করার যে ডাক বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির ডাক দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্য সবাই কে এগিয়ে আসতে ডাক দিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন,বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ, তাঁর সংগ্রামী জীবনের অবদানকে মুছে ফেলার সব ধরনের চেষ্টা করেছে সব সরকারই। যারা এসব করেছে তাদের প্রতি তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন,‘জাতির পিতার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। বিকৃত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছিল। ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারে না। নিশ্চিহ্ন করতে পারে না। আজ তা প্রমাণিত হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষণ কে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর এই বার প্রথম বার সেই সম্মাননা উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের বিশাল জনসভায় তিনি এ সকল কথা বলেন। আজ সকাল থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সমাবেশে নেতা-কর্মীরা যোগ দিতে থাকে কিন্তু দুপুর দুইটার দিকে সেটা রূপ নেয় জনসমুদ্রে। এ সময় নেতা-কর্মী বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা ছবি,পোস্টার, ব্যানার, প্রতিকৃতি সহ সমাবেশে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশের সভাপতি হিসেবে ৪ টা ৪০ মিনিটে ভাষণ শুরু করেন। তিনি ভাষণের মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী ঘটনাপ্রবাহ,মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ,’৭৫ এ কে বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং তার পরবর্তী ঘটনাবহুল তুলে ধরার পাশাপাশি তার ৪০ মিনিটের ভাষণে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে বড় অংশ জুড়ে। শেখ হাসিনা বলেন,”এই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক যেন যুবসমাজকে নষ্ট করতে না পারে। আজকে আপনারা বিবেচনা করে দেখেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়। অন্যরা স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করত না, তাই দেশের উন্নতি হয়নি, নিজেদের উন্নতি করেছে। দেশের মানুষের উন্নতি হয়নি। আজকে সারা দেশের মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে।”
তিনি তার ভাষণে আরও বলেন,”গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে উন্নয়নের কথা জানাতে হবে। আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আগামী মাসেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হবে। বাংলাদেশ যেন কারও কাছে ভিক্ষা করে না চলে, তার ব্যবস্থা করছি। বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে।”
যুদ্ধাপরাধ ও খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে বলে,”যুদ্ধাপরাধী ও খুনিরা যেন আর কখনো বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে। যারা এতিমের টাকা চুরি করে, যারা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়, যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে, তারা যেন দেশকে আর ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে না পারে। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী সমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য আরও বলেন,যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করে, গণহত্যা করে, লুটপাট, দুর্নীতি করে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে, যারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়, তারা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। যারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি—তাঁরা সতর্ক থাকবেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল এই জনসভা শুরু হয় বিকাল ২ টা ৩০ মিনিট থেকে। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাসান মাহমুদ অনুষ্ঠান টি পরিচালনা করেন। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী যোগ বেলা ৩ টার দিকে। অনুষ্ঠান শুরুর ঘোষণা দেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সমাবেশে উদ্ভোধনী বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।
সমাবেশে কবি নির্মলেন্দু গুণ তার রচিত “স্বাধীনতা শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো” কবিতা টি আবৃত্তি করে শোনান।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ, সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন এবং যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমা আক্তার।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply