দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটে নাকাল হওয়ার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা অনেকের রয়েছে। এর মধ্যে বিভীষিকাময় অংশটুকুর নাম ছিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর পর্যন্ত। বিশেষ করে মেঘনা ও গোমতী সেতুর মুখে যানজটে আটকে থাকতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
তবে রবিবার (২৬মে) ওই পথগামী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেল নতুন অভিজ্ঞতা। শনিবার (২৫ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পর ওই মহাসড়কে অবস্থিত চার লেনের মেঘনা ও গোমতী সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। সেতু দুটো চালু হওয়ার একদিনের মধ্যেই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন। এই পথে চলাচল করতে গিয়ে যারা ভুক্তভোগী ছিলেন তাদের চোখেও এখন খুশির ঝিলিক।
এখন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছেন জানিয়ে ট্রাক চালক ওবায়দুল কবির রানা বললেন, ‘এখন শান্তিতে আছি। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।’
কুমিল্লা দাউদকান্দির বাসিন্দা দোকান মালিক সাহাবউদ্দিন জানালেন, আগে দাউদকান্দি থেকে ঢাকায় যেতে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লাগতো। এখন ৪৫ মিনিটে ঢাকায় যাওয়া যাবে।
গোমতী সেতুতে প্রায় তিন বছর ধরে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করেন মনির হোসেন। জানালেন, সামনে ঈদ। কি যে, ভাল হয়েছে। এখন আর কোন যানজট লাগবে না। এর আগে প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকতো।
গোমতী সেতুর ঢাকামুখী অংশের টোল কনট্রাকটার রুবেল হোসেন বলেন, এদিক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৭’শ ট্রাক ও ৩’শ এর মত প্রাইভেটকার ঢাকার দিকে চলে যায়। আর বাস তো আছেই। প্রায় প্রতিদিনই এখানে কয়েক কিলোমিটার যানজট লেগে থাকতো। এই জায়গাটুকু পার হতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতো।
একই সুরে টোল গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সহকারী ম্যানেজার আবুল কালাম বলেন, আগে শুধু এক লেনে গাড়ি চলতো। এখন চার লেনে গাড়ি চলছে। এভাবে চললে যানজট হবে না। কিন্তু আগে এখানে গাড়ির খুব চাপ ছিল।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দিকে আসছিলেন সোহাগ পরিবহনের চালক মানিক। তিনিও জানালেন, গতকাল (শনিবার) থেকে ভাল যাচ্ছে। আশা করি এখন থেকে এমনটাই চলতে থাকবে।
বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার অর্থায়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১২ স্প্যানের ৯৩০ মিটার দৈর্ঘে্যর দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণে খরচ হয় এক হাজার ৭৫০ কোটি। আর ১৭ স্প্যানের ১ হাজার ৪১০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থের গোমতী সেতুর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পের ৪১তম মাসে এসে শেষ হয় সেতু দু’টির নির্মাণ কাজ।
সেতু দুটি নির্মাণে জাপানের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা। এই সেতু চালু হওয়ায় মেঘনা ও গোমতীর পুরোনো সেতুগুলোর মেয়াদও বাড়বে বলে দাবি করেন তারা। শনিবার নতুন সেতু চালু হওয়ায় পুরোনো সেতু দুটির সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ পুরনো সেতু দুটোর সংস্কার কাজ শেষ হবে।
সরেজমিনে রবিবার কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গোমতী সেতুর সামনে গিয়ে দেখা গেল, চার লেন দিয়ে গাড়ি পারাপার হচ্ছে। কোথাও কোন যানজট নেই। তবে সেতুর আশে-পাশে সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ এখন চলেছে।
গোমতী সেতুর প্রকল্প ম্যানেজার (সাব কনট্র্যাক) প্রকৌশলী এস এম নবীরুজ্জামান জানালেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পটির উদ্বোধন করা সম্ভব হয়েছে।
এই সেতু দুটি তৈরিতে কি ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সেতুতে ডিজাইনগত উন্নয়নের জন্য স্টিল গার্ডার ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে সেতুর মধ্যে মাত্র একটি জয়েন্ট থাকবে। ফলে ঝুঁকি কমে আসবে। সেতুর পাইলিং সিস্টেমও অত্যাধুনিক ছিল।
তিনি বলেন, গোমতীর পুরনো সেতুটির সার্ভে চলছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ পুরনো সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে। পুরনো সেতুতে কার্বন ফাইবার ( এক ধরনের ধাতু) দিয়ে কাজ করা হবে, যা কনক্রিটের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।
সরেজমিনে সেতুর নিচে গিয়ে জানা গেল, রেট্রোফিডেট ওয়ালের (পুরনো সেতুর পিলারের সঙ্গে নতুন সেতুর পিলার জুড়ে দেওয়া) মাধ্যমে নতুন সেতুটি নির্মাণ করায় পুরনো সেতুটি আগের চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হবে।
গোমতী সেতুতে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন ব্যবহার করা হয় বলে জানিয়েছে ওই সেতুর ডেপুটি প্রকল্প ম্যানেজার (সাব কনট্র্যাক) প্রকৌশলী এস এম রবিউল ইসলাম। এই সেতু দুটিতে যে প্রযুক্তিতে কাজ করা হয়েছে এটা বিশ্বে তৃতীয় ও বাংলাদেশে প্রথম বলেও জানান তিনি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
খবরটি যদি গুরুত্বপুর্ন মনে হয় তাহলে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার করুন
Leave a Reply