কামরান আহমেদ রাজীব কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃকুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বিভিন্ন এলকায় উপজেলা নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসাবে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ বিন তুহিনের (৩০) ওপর হামলা চালানো হয়েছে। তাকে হাতুড়ি ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে হামলাকারীরা। গতকাল সোমবার রাতে দৌলতপুর থানা বাজারে ছাত্রলীগ নেতা তুহিনের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় মহিষকুণ্ডি সীমান্তের বাঁধের বাজার এলাকায় প্রতিপক্ষের হামলায় দুই নারীসহ তিনজন আহত হন। দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিয়াউল আলমের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। তারা আগের দিন শেষ হওয়া উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরীর পক্ষে ভোট করায় এসব হামলার শিকার হন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া উপজেলার হরিণগাছি এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। নৌকা ও আনারসের কর্মীরা বর্তমানে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। জানা গেছে, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ বিন তুহিন সোমবার রাত ৮টার দিকে দৌলতপুর থানা বাজারের তালতলায় একটি দোকানে বসে কম্পিউটারে কাজ করছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগের বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুনের সমর্থিত স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ফারুক খানের নেতৃত্বে কয়েক যুবক ছাত্রলীগ নেতা তুহিনের ওপর অতর্কিত হামলা করে। তারা লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তুহিনকে গুরুতর আহত করে। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আব্দুর রহিম একদল ফোর্স নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পুলিশ তুহিনকে তাৎক্ষণিক দৌলতপুর হাসপাতালে নেয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহত আব্দুল্লাহ বিন তুহিন কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক শিকল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার। তিনি টোকেন চৌধুরীর আনারসের পক্ষে কাজ করায় এই হামলার শিকার হন। আরও পড়ুন: এক মিনিটের অন্ধকারে সারা দেশ অন্যদিকে উপজেলার মহিষকুণ্ডি সীমান্তের বাঁধের বাজার এলাকায় আনারসের কর্মী আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিজ বাড়ির সামনে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যার দিকে আনারসের কর্মী আশরাফুল ইসলাম বাড়ি থেকে বাজারের উদ্দেশে বের হলে আওয়ামী লীগ কর্মী দিদার মণ্ডলের নেতৃত্বে নৌকার কর্মীরা তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাকে লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। তার চিৎকারে বাড়ির ভেতর থেকে পরিবারের লোকজন ছুটে আসলে তাদেরকেও মারপিট করা হয়। এ ঘটনায় আশরাফুল ইসলাম (৪৫), তার স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন (৩৭) ও তাদের ৬ মাসের অন্তসত্ত্বা মেয়ে চুমকি (২০) আহত হন। তারা দৌলতপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দুপুরের দিকে তারাগুনিয়া বাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, বিআরডিবি সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউল আলমের বাড়িতে হামলা করে নৌকা সমর্থিতরা। জিয়াউল আলম নির্বাচনে আনারসের পক্ষে কাজ করায় তার বাড়িতে এ হামলা চালানো হয়।
জিয়াউল আলমের ছোট ছেলে অ্যাডভোকেট শাওন সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ৮-১০ জন কর্মী তার বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় বাড়ির প্রধান গেট বন্ধ থাকায় হামলাকারীরা গেট ভাঙার চেষ্টা করে। গেটের দরজা ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে তারা গেটের বাইরে রাখা কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করে। এ সময় তারা বাড়ির লোকজনকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা চলে যায়। এদিকে উপজেলার হরিণগাছি এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
নৌকা ও আনারসের কর্মীরা বর্তমানে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। যে কোনো সময় তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। হরিণগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার চেয়ে আনারস প্রতীকে প্রায় তিনশ ভোট বেশি পড়ায় প্রতিপক্ষের কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সশস্ত্র মহড়া দেয়। প্রতিহত করতে আনারসের কর্মীরাও তৎপর হয়ে ওঠায় দুই পক্ষের টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। দৌলতপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, নির্বাচন পরবর্তী কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও পুরো পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply