
পুলিশ সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের প্রায় তিন মাস আগে আব্দুল্লাহ হাসান তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক এরশাদকে চড় মারে। গ্যারেজে গাড়ি রাখতে গিয়ে কিশোর হাসানের শরীরে গাড়ি লাগিয়ে দেয় এরশাদ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাসান এরশাদকে চড় মারে ও গালিগালাজ করে। এ ঘটনায় হাসান গাড়ি চালকের নিকট কয়েকবার ক্ষমা চেয়েছিলো। কিন্তু এরশাদ মিয়া তাকে ক্ষমা করেননি।
মৌলভীবাজারে আলোচিত স্কুল ছাত্র হাসান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এসব স্বীকারোক্তি দিয়েছে ঘাতক এরশাদ। চড় মারা ও গালিগালাজ করার প্রতিশোধ নিতেই হাসানকে কুপিয়ে খুন করে সে। বুধবার বড়লেখার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. হাসান জামানের আদালতে এরশাদ ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি দেয় বলে জানায় পুলিশ।
গাড়ি চালক এরশাদ মিয়া ভোলা জেলার শশীভুষন থানার চরমায়া গ্রামের কবির মিয়ার ছেলে। তিনি বড়লেখায় নিহত আব্দুল্লাহ হাসানের বাবার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ছিলেন। অপমানের প্রতিশোধ নিতে হাসানকে নির্মমভাবে হত্যা করে বলে আদালতকে জানিয়েছেন এরশাদ। ঘটনার প্রায় চার মাস পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
ঘটনার প্রায় তিন মাস পর সুযোগ বুঝে তাকে হত্যা করে এ অপমানের প্রতিশোধ নেন। অপমান বোধ থেকেই তিনি হাসানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। জরুরী কথা আছে বলে হাসানকে নির্জন টিলায় নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইতে) স্থানান্তরের প্রায় তিন মাসের মাথায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেন।
জানা গেছে, ১৮ জানুয়ারি রাতে আব্দুল্লাহ হাসান বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়। সে উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আব্দুর রহিমের ছেলে এবং সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মনির আহমদ একাডেমির নবম শ্রেণির ছাত্র। ছেলে নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে ২৩ জানুয়ারি দেশে ফিরেন আব্দুর রহিম।
নিখোঁজের ১০ দিন পর ২৮ জানুয়ারি রাতে মোহাম্মদনগর এলাকার একটি নির্জন টিলার ঢালু স্থানে আব্দুল্লাহ হাসানের খন্ডিত পচা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৩০ জানুয়ারি নিহতের বাবা প্রবাসী আব্দুর রহিম ৩ জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। পরদিন পুলিশ আব্দুর নূর বলাই (৫০), তার ভাই বদরুল ইসলাম এবং বাদির ভাতিজা তারেক আহমদকে (২২) গ্রেফতার করে। হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ আসামীদের ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়। পরবর্তীতে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইতে) স্থানান্তর হয়।’
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসান এরশাদকে চড় মারে ও গালিগালাজ করে। এতে এরশাদের মনে ক্ষোভ জন্মে। এ থেকেই সে ঘটনাটি ঘটিয়েছিল বলে স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে। এরশাদ ঠান্ডা মাথায় পূর্বপরিকল্পনা মতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটালেও থেকে ছিল সন্দেহের উর্ধ্বে। এরশাদের তিনটি কর্মকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে আমরা তদন্ত করি। এসব কারণে থাকে আটকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শনিবার তাকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু তিনি ৩ দিনের মধ্যে লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তি প্রদান করে।
একটা সাধারণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক স্কুলছাত্রের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে হলো। কতটা নৈতিক অবক্ষয় হলে এমনটি হতে পারে? এজন্যে পরিবার থেকে শেখানো নৈতিক শিক্ষাটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply