
সোমবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের ওপর ছড়াও হয় পুলিশ। এ সময় পুলিশ টিয়ার শেল, জলকামান ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। জবাবে শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। দুপুর ২টা পর্যন্ত দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় শিক্ষার্থীদের। এ সময় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রায় ৭০ জনকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক আহত হয়েছে।এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম, শিক্ষক সমিতি ও জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদেরকে অবরোধ তুলে নিতে বলেন। তবে আন্দোলনকারীরা ঘটনাস্থল ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে পারি নাই। পরে পুলিশ তাদের সরাতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।’
পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন। তিনি বলেন, ‘গ্যাসে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হই আমি।’
শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেলে ২০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার সাঈদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার জন্য আমরা প্রথম থেকেই অনুরোধ জানাচ্ছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যখন গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমরা কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে বাধ্য হই। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছুড়ে মারা ইট-পাটকেলের আঘাতে ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।’
হামলায় উপাচার্যের নিন্দা-প্রতিবাদ:
এদিকে বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে ঘটনাস্থলে যান। আন্দোলনে যারা আহত হয়েছে তাদের সবার চিকিৎসার ব্যয় প্রশাসন বহন করবে বলে ঘোষণা দেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন তিনিসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা।
ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে উপাচার্য এ সময় বলেন, ‘আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সড়কপরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটর জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ যতজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি তাদের কাছে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছি। তাদের বলেছি, এটা এভাবে সমাধান করা যায় না। আলোচনার মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান হতে পারে। তার জন্য টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, লাঠিপেটা করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আমরা কেন এ রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়লাম। আমি এর জবাব চাই।’
উপাচার্য আরো বলেন, ’৫৬ শতাংশ কোটা আসলেই একটি জাতির জন্য লজ্জাজনক। এ আন্দোলনে আমাদের সমর্থন আছে, আমরা তোমাদের পাশে আছি। প্রয়োজন হলে তোমাদের সাথে আমরা একসাথে আন্দোলন করব।’
এ সময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমির হোসেন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক বশির আহমেদসহ জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনদিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা:
পরবর্তী সময়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে একটি সমাবেশে মিলিত হয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা আগামী তিনদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের মাধ্যমে ধর্মঘট আহ্বান করে। আন্দোলনের আহ্বায়ক আইন বিভাগের শিক্ষার্থী খান মো. মুনতাসির আরমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply