বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেন-এর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত তরুণ প্রজন্ম।
বিজয় দিবসের দিন রোববার বিকেলে পুরনো পল্টনে অবস্থিত ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয়ে এই স্মারকলিপি প্রদান করতে যান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ৩০ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল।
প্রতিনিধি দলের সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমফিল গবেষক এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন বলেন: আজ মহান বিজয়ের দিন। এই দিনে আমরা ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বরাবর জাতীয় রাজনীতি থেকে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের আহ্বান জানিয়ে স্বারকলিপি প্রদান করেছি। তিনি ধন্যবাদ দিয়েছেন এবং আমাদের স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই বিষয়ে তারা আলোচনা করবেন এবং দেখবেন।
‘আমরা ড. কামাল হোসেনকে বলেছি, আপনি মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। আপনার নেতৃত্বে এই দেশের সংবিধান প্রণীত হয়েছে। আপনি সংবিধানে লিখেছেন: আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল-জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে। কিন্তু আপনি বর্তমানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমে প্রকারান্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতের সাথে রাজনৈতিক জোট গঠন করেছেন, যা আপনার প্রণীত সংবিধানের চার মূলনীতির মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।’
শয়ন আরও বলেন, আমরা স্মারকিলিপিতে ড. কামাল হোসেনকে আরো লিখেছি: আপনার প্রণীত সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদে ছিলো- ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার, কোনো বিশেষ ধর্মপালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে। কিন্তু বর্তমানে আপনি ও আপনার নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জামায়াতের সাথে জোট গঠনের মধ্যদিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের ব্যবহারের বৈধতা দিয়েছেন।
কোন দল বা গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে স্মারকলিপি দিতে এসেছেন কিনা, এমন প্রশ্নে শয়ন বলেন: আমরা কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আসিনি। কোনো গোষ্ঠি থেকেও আসিনি। বিবেকের তাড়না থেকে এসেছি। তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ লালন করে। সেই আদর্শ থেকে এই স্মারকলিপি প্রদান করেছি। আমরা বলেছি, আপনারা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু অত্যন্ত দু:খের সঙ্গে দেখছি যে, আপনাদের সঙ্গে জামায়াতও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে। আপনি কেন যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে নির্বাচনে যাচ্ছেন, তা তরুণ প্রজন্ম মেনে নিতে পারছে না।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত তরুণ প্রজন্মের স্মারকলিপিতে দাবি জানানো হয় যে, জাতীয় রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতের সাথে সঙ্গ ত্যাগের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিতে হবে, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারীদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী ও জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের মহাসচিব মোস্তফা মহসিন মন্টু সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তবে স্মারকলিপি প্রদানের সময় প্রতিনিধি দলের শুধুমাত্র একজনকে ড. কামাল হোসেন এর কক্ষে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply