
মাঝখানে একটিমাত্র কর্মদিবস যেন বিষফোঁড়ার মতো বসে আছে টানা ৯ দিনের ছুটিতে। ওই এক দিনকে ছুটি ঘোষণা করে কর্মহীন করলে টানা ৯ দিনের ছুটির আনন্দে ভাসবে দেশ। ঈদ-আনন্দ ভাগাভাগি করতে মানুষ তখন নিশ্চিন্ত মনে ছুটিতে যেতে পারবে গ্রামের বাড়ি। লম্বা ছুটির কারণে রাস্তাঘাটের ওপরও চাপ কমবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও স্বস্তিমতো দায়িত্ব পালন করতে
পারবে। যানজটে আটকা পড়তে হবে না পরিবার-পরিজন নিয়ে। কিন্তু ওই কর্মদিবসকে ছুটি ঘোষণা করার কোনো প্রস্তাব দেয়নি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সাধারণত এ ধরনের পরিস্থিতিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীকে সংশ্লিষ্ট দিনে ছুটি ঘোষণার জন্য সারসংক্ষেপ পাঠায়। কখনো কখনো সেই সারসংক্ষেপ অনুমোদন হয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফেরে। আবার কখনো কখনো অনুমোদন না হয়েই ফেরে। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবই যায়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি শাখার অতিরিক্ত সচিব মো. রইছ উদ্দিন গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৩ জুন সোমবার ছুটি ঘোষণার কোনো সিগন্যাল পাইনি আমরা। তাই ছুটি ঘোষণার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।’
আগামী ৩১ মে শুক্রবার ও ১ জুন শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ২ জুন রবিবার পবিত্র শবেকদরের ছুটি। ৩ জুন সরকারি কর্মদিবস। ৪ জুন মঙ্গলবার থেকে ৬ জুন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের ছুটি। এরপর ৭ জুন শুক্রবার ও ৮ জুন শনিবার আবারও সাপ্তাহিক ছুটি।
সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত সংস্থা-প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় ও ছুটি নির্ধারণ করে মন্ত্রিসভা। ‘এলোকেশন অব বিজনেস’ অনুযায়ী ছুটির বিষয়টি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি শাখা। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন সাধারণ ছুটি। এ ছাড়া এ দুই ঈদের আগের ও পরের দিন নির্বাহী আদেশে ছুটি থাকে।
এখন প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়সহ সারা দেশের সরকারি অফিসের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ৩ জুন সোমবার নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি। অনেকে পরিকল্পনা করছেন টানা ছুটি পেতে তারা ৩ জুন ব্যক্তিগতভাবে ছুটি নেবেন। কিন্তু সেই ছুটি নিতে গেলে তাদের ঈদের আগের বা পরের ছুটিগুলোকে নিজের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। অর্থাৎ কোনো সরকারি কর্মচারী যদি ৩ জুন সোমবার ছুটি নিতে চান, তাহলে তাকে ৩১ মে, ১ জুন ও ২ জুনও ছুটি নিতে হবে। অথবা সেই কর্মচারীকে ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ জুনও ছুটি নিতে হবে। তারা এসব ছুটিকে নৈমিত্তিক ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করতে পারবেন। সংশ্লিষ্টদের যদি নৈমিত্তিক ছুটি না থাকে, তাহলে তাদের অর্জিত ছুটির সঙ্গে এসব ছুটি সমন্বয় হবে। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে যদি ৩ জুন সোমবার ছুটির ঘোষণা দেওয়া হয়, তা হলে বিষয়টি বেশি সুবিধাজনক হয়। তখন কর্মচারীদের ব্যক্তিগত ছুটি নেওয়ার বিষয়টি আর আসবে না। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে ৩ জুন ছুটি দিয়ে পরিবর্তে সাপ্তাহিক ছুটির একটি দিন অফিস খোলা রাখা যেতে পারে বলে বলা হচ্ছে।
২০১৬ সালে শবেকদর, সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে ঈদুল ফিতরের ছুটি মিলিয়ে টানা ৯ দিনের ছুটির মধ্যে এক দিন অফিস খোলা ছিল। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাঝের এক দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই ছুটি ঘোষণার জন্য জনপ্রশাসন থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল।
এবার রমজান মাস ২৯ দিনের হবে ধরে নিয়ে মন্ত্রিসভা ছুটির যে তালিকা অনুমোদন করেছে, তাতে দেখানো হচ্ছে ঈদ হবে ৫ জুন বুধবার। রমজান মাস ৩০ দিনের হলে ঈদ হবে ৬ জুন বৃহস্পতিবার। ঈদ যেদিনই হোক না কেন ঈদের ছুটি শুরু হবে ৪ জুন মঙ্গলবার থেকে।
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। প্রতি ঈদেই রাজধানী ও অন্যান্য বড় শহর থেকে লাখ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়িতে যায়। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রেল, সড়ক ও নৌপথে দেখা যায় উপচেপড়া ভিড়। সবাই একসঙ্গে রাজধানী ও বড় শহর ছাড়তে গিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক গাড়িচালক দেশ রূপান্তরকে জানান, তার বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলায়। ঢাকার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ৬টায় লঞ্চ ছাড়লে তা ভোর ৬টায় পটুয়াখালী পৌঁছায়। সেখান থেকে চার ঘণ্টার বাস জার্নি করে তাকে বাড়ি পৌঁছাতে হয়। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে তিনি ঈদের আগের দিন দুপুর নাগাদ বাড়ি পৌঁছাতে পারেন। আর উল্টাপাল্টা হয়ে গেলে ঈদের দিন বাড়ি পৌঁছাতে হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত পঞ্চগড় সদরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, সব কিছু ঠিক থাকলে তিনি ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় বাড়ি পৌঁছাতে পারেন।
অনেক সময় এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ঈদের দিন কয়েক ঘণ্টা বাড়িতে থেকেই কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন। এ অবস্থায় ঈদের ছুটি কয়েক দিন বেশি হলে তারা স্বস্তিমতো ঈদে বাড়ি যেতে পারেন এবং ফিরে আসতে পারেন।
২০১৭ সালে দেশের সব প্রধান ধর্মীয় উৎসবের ছুটি বাড়ানোর একটি প্রস্তাব দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যেখানে ঈদের ছুটি কমপক্ষে ছয় দিন করার প্রস্তাব ছিল। একইভাবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উৎসবের ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখে অমীমাংসিতভাবে ফেরত পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদের সময় ঢাকাসহ অন্য বড় শহরগুলো থেকে সরকারি ও বেসরকারি অফিসের চাকরিজীবীরা নিজ শহর ও গ্রামে প্রায় একই সঙ্গে যাত্রা শুরু করেন।
এতে যানবাহনের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়ে। দুর্ঘটনা বেড়ে যায় এবং দূরপাল্লার যাত্রায় দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়। আবার ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার পর ১-২ দিন সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীদের উপস্থিতি কম থাকে। কর্মচারীদের উপস্থিতি কম থাকা সত্ত্বেও ইউটিলিটি সার্ভিস যেমন লিফট, গাড়ি চালু রাখতে হয়। এসব সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রস্তাবে বলা হয়, সার্বিক বিবেচনায় প্রধান ধর্মীয় উৎসবের ছুটি বাড়ালে জনদুর্ভোগ লাগব হতে পারে। ছুটি ছয় দিন হলে যানবাহনের ওপর চাপ, যানজট ও দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে। এতে অনাকাক্সিক্ষত প্রাণহানি কমানো সম্ভব। ঈদুল ফিতর ও আজহায় তিন দিনের ছুটির সঙ্গে কর্মচারীদের নৈমিত্তিক ২০ দিনের ছুটি থেকে তিন দিন করে মোট ছয় দিন কেটে ঈদের ছুটি নির্ধারণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বার্ষিক নৈমিত্তিক ছুটি থাকবে ১৪ দিন। একই সঙ্গে অন্য প্রধান ধর্মীয় উৎসবের ছুটি এক দিন থেকে বাড়িয়ে চার দিন করা যেতে পারে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
খবরটি যদি গুরুত্বপুর্ন মনে হয় তাহলে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার করুন
Leave a Reply