
প্রতিদিনকার মতো লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। অপেক্ষা বাসের। মাথার উপর তীব্র রোদ, তার উপর এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে। এমনি সময় এক লোকের সাথে টিকেট বিক্রেতার হৈ-চৈ।
জায়গার নাম- হাতিরঝিল। লোকটির যুক্তি- দু মিনিট যেখানে বাসের রাস্তা, সেখানে দশ টাকা ভাড়া কীভাবে হয়? আমি আমার হাতের টিকিটের দিকে তাকাই। সত্যিই তো! দশ টাকা দিয়েই কেনা। বাসে উঠলে জাস্ট আড়াই মিনিটেই পৌঁছে যাব পরের স্টপেজে।
শহরের সাধারণ রাস্তাগুলোতে বাস নিয়ে যে ভোগান্তি শুরু হয়েছে- তা যেন থামছেই না। বরং একে অন্যের দেখাদেখি উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। সিটিং সার্ভিসের নামে চলছে যাত্রী হয়রানির পাঁয়তারা। এরা বাসের গেট বন্ধ করে- যাত্রীরা যেন ঢুকতে না পারে। এবং ভেতরের যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেয় দ্বিগুন- কখনো তারও বেশি। কোনো কোনো বাস আবার এক কাঠি বেশি সরেস। এরা না সিটিং, না মুড়ির টিন! খুলে বসেছে ‘চিটিং’ সার্ভিস। মানুষ দাঁড়িয়ে যাবে, অথচ ভাড়া নেবার সময় মনে হয়- এটা ‘সিটিং’ বাস।
বাস মালিক কল্যান সমিতি রয়েছে, শ্রমিক কল্যান সমিতি রয়েছে। শুধুমাত্র যাত্রীদের কোনো ‘কল্যান’ এর দরকার নেই। তারা নিয়মিত হাইজাম্প করে বাসে উঠে, বাদুড়ঝোলা হয়ে সিটিং বাসের ভাড়া দেবে। কিংবা বাসের বন্ধ দরজার সামনে হাত-পা নাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে- বাস একটা জেট প্লেনের মতো সাঁই করে চলে যাবে। ঢাকার মতো জনবহুল একটি শহর- যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে হাজার মানুষের বাস, সেখানে এই ‘সিটিং সার্ভিস’ কতোটা যুক্তিযুক্ত? ফুঁটো তলার বালতিতে পানি রাখবার চেষ্টা কতটা বাস্তবসম্মত?
তো, বলছিলাম হাতিরঝিলের কথা। মগবাজার থেকে মৌচাক যাওয়া যায় পাঁচ টাকায়। কিংবা কমলাপুর- মতিঝিল যায় দশ টাকায়। এসব এলাকায় থাকে তীব্র যানজট। তার উপর দুরত্বটাও নেহায়েত কম নয়। হাতিরঝিলের ‘আহামরি’ বাসে দু মিনিট পথ যেতে আপনাকে গুনতে হবে দশ টাকা সর্বনিম্ন।
কোনো বিকেলে হাঁটতে বেরোই- হাতিরঝিলে। হেঁটে দেখি- ঠিক পনেরো মিনিট হেঁটে পরের স্টপেজে পৌঁছানো যায়। যে মানুষটা প্রতিবাদ করেছিলেন সেদিন, আমি তাঁর পাশে যাই নি। তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলিও নি- এটা ঠিক হচ্ছে না। বাস যথারীতি এসেছে। আমি টিকেট দেখিয়ে উঠে পড়েছি। একা নই- অনেকেই। এই ‘অনেকেই’ অভ্যস্ত এসব অনিয়ম দেখতে দেখতে, চলতে চলতে। প্রশাসন অভ্যস্ত ঘুমিয়ে। কে জানে, সেই ভদ্রলোকটি হয়তো অভ্যস্ত ছিলেন না। দেখে ভালো লাগলো- দু, একজন হলেও আছেন। যেদিন এঁরাও অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন অনিয়মে, দেশটা অমেরুদণ্ডীর মতো বুকে ভর দিয়ে চলবে।
Leave a Reply