২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ১০ মাস পরেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) হঠাৎ গণমাধ্যমকে জানায় যে তারা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। তখনই তারা সামনে আনে ‘জজ মিয়া’ নামের এক তরুণকে।
জানানো হয়, জজ মিয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে জজ মিয়াকে নিয়ে সিআইডির মিথ্যাচারের বিষয়টি। ২০০৫ সালের ২৯ জুন ছাপা হয় ‘সেই জজ মিয়া তারকা সন্ত্রাসী’ শিরোনামের সংবাদ, সঙ্গে ছিল পুলিশের আষাঢ়ে গল্প সাজানোর একটি কার্টুন। এরপর জজ মিয়া ইতিহাস। এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মিথ্যা তদন্তের সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে ‘জজ মিয়া নাটক’ শব্দগুচ্ছ।
কিছুটা বাষ্পরুদ্ধ গলায় জজ মিয়া বলেন, ‘একটা মাস আমারে আটকায়ে কী যে মারা মারছে সিআইডি, বলার মতো না। যতক্ষণ না আমি সব স্বীকার করতে রাজি হইছি, ততক্ষণ চলছে নির্যাতন। এখনো সেই ব্যথা যায়নি। ডান হাতের হাড় ফেটে গিয়েছিল। মেরুদণ্ডের ব্যথাটা এখনো যায়নি।’
আবার আদালতে হাকিমের খাসকামরায় গিয়ে সাজানো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কাগজে সই করার পরে সিআইডির দুই কর্মকর্তা মুন্সী আতিক ও আব্দুর রশীদ জজ মিয়া, হাকিমসহ বিরিয়ানি খান। এরপর জজ মিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে ২০০৮ সালের ২৬ আগস্ট প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘সাজানো জবানবন্দির পর জজ মিয়াকে নিয়ে আদালতে বিরিয়ানি খান তদন্ত কর্মকর্তা’।
হতাশা প্রকাশ করে গতকাল জজ মিয়া বলেন, নির্যাতিত হলেও পরবর্তী সময়ে তিনি সরকারের কাছ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ বা সাহায্য পাননি। এখন ৩৭ বছরের জজ মিয়া এ বছরই বিয়ে করেছেন। এখন তাঁর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মামলা তো শ্যাষ। তয় নির্যাতন আর পত্রিকায় নাম উঠা ছাড়া আমি কী পাইলাম? এখন যদি সরকার আমার দিকে দয়ার দৃষ্টি দেয়, আমার বিষয়টা মানবিকভাবে দেখে।’
২০০৪ সালে ওই গ্রেনেড হামলার দিনই পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে। পরদিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মামলা দিতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। শুরু থেকেই তদন্তের গতি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা চলে। শৈবাল সাহা পার্থ নামের ভারত থেকে পড়ে আসা এক তরুণকে আটক করে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। শৈবালের সূত্র ধরে ওই ঘটনার দায় পার্শ্ববর্তী একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করারও চেষ্টা চলে। শৈবাল এখন দেশে বেসরকারি চাকরি করেন। সেই আতঙ্ক এখনো কাটেনি। রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল মুঠোফোনে শৈবাল বলেন, ‘রায় নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে অন্যায় না করেও আমি কঠিন শাস্তি পেয়েছি।’
এই বর্বরোচিত হামলায় ষড়যন্ত্রের চেষ্টা রাজনীতিকে এক নগ্ন রূপ দিয়েছে, যে ভুল ক্ষমার অযোগ্য। এতে ফাঁসানো হয়েছে নির্দোষ, নিষ্পাপ কিছু মানুষকে। যারা এর সঙ্গে জড়িতই ছিলেন না। এত বছর পর এই রায় হয়তো কিছুটা স্বস্তি দেবে তাঁদেরও।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ মোঃ মোস্তফা কামাল
Leave a Reply