
এবার রাজধানীতে হলো জোড়া খুন। রাজধানীর গুলশান এলাকার ঘটনা। গুলশান থানা এলাকার কালাচাঁদপুরের একটি বাসা থেকে গারো সম্প্রদায়ের মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ফ্ল্যাটের যে ঘরে বেসেথ চিরান (৬৫) ও তার মেয়ে সুজাত চিরানের (৪০) লাশ পাওয়া গেছে, সেই ঘরেরই চৌকির ওপরে বসে কাঁদছিল সুজাত চিরানের নাতনি মায়াবীর এক বছরের অবুঝ শিশুটি।
শিশুটির বাবা অর্থাৎ সুজাতার জামাই পেলেস্টার চিরান বাসায় ঢুকে দেখেন প্রথম ঘরের চৌকির পাশে কাত হয়ে পড়ে আছে বেসেথ চিরানের লাশ। আর চৌকির ওপরেই বসে কাঁদছিল তার এক বছর এক মাসের শিশুকন্যা একুশি। পরের ঘরে চৌকির ওপর পড়ে ছিল একুশির নানি সুজাতার লাশ। এই দৃশ্য দেখেই তিনি বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বাসা থেকে বের হয়ে নিচে চলে আসেন।
ওই বাসার দারোয়ান, নিহতের স্বামী ও নিহতদের নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এই বিষয়ে বাসার দারোয়ান আব্দুল আজিজ বলেন, ‘তাদের যখন মারা হইছে, তখন ওই বাচ্চাটা বাসাতেই ছিল। কিন্তু বাচ্চাটারে মারে নাই। ওর বাপে (পেলেস্টার চিরান) যখন ঘরে গিয়া লাশ দেখে তখন বাচ্চাটা চৌকিতে বসে কানতেছিল। ওর বাপে ওরে কোলে লইয়া দৌড়ে নিচে নাইমা আসে।’
নিহতদের আত্মীয় ও বাসার পাশের একটি দোকানের মালিক বাঁধন চেরান ওই বিষয়ে বলেন, ‘সুজাতার জামাই পেলেস্টার চিরান বাসায় ফিরে লাশ দুটি দেখে দৌড়ে নিচে নেমে আসে। এ সময় তার ছোট বাচ্চাটি ঘরের চৌকির ওপরে বসে কান্নাকাটি করছিল। তাকে কোলে নিয়ে সে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।’
বুধবার বেলা সাড়ে ৪টার দিকে নিহত মা-মেয়ের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে কালাচাঁদপুর এলাকার বালুর মাঠে নিয়ে আসা হয়। সেখানে ঘণ্টা খানেক রাখার পর লাশ দুটি তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সেখানে কথা হয় নিহত সুজাতার স্বামী আশিশ মানকিনের সঙ্গে। তিনি কান্নাজড়িত গলায় বলেন, ‘আমার বৌটারে কেন ম্যাইরা ফালাইলো। কী দোষ করছিল। আমার নাতিটারে নিয়ে আমরা কত কী আশা করছিলাম। আমার নাতিটা তার নানি ছাড়া কারো কাছে থাকতে চায় না।’
খুনের সময় কি আপনার নাতি ওই ঘরেই ছিল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাতিটার সামনেই মনে হয় খুন করছে।’ বলেই চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন তিনি।
এদিকে দুজনকে হত্যার ঘটনায় নিহত সুজাতের ভাগ্নে সঞ্জীব চিরানসহ চারজনকে খোঁজ করছে পুলিশ। কারণ ঘটনার ঠিক আগেই সঞ্জীব ও তার তিন বন্ধু ওই বাসায় এসেছিলেন। তখন বাসায় ছিলেন নিহত বেসেথ চিরান (৬৫) ও তার মেয়ে সুজাত চিরান (৪০) এবং সুজাত চিরানের মেয়ে মায়াবী। সন্ধ্যার দিকে মায়াবী বাসা থেকে বের হয়ে কাজে যান। এ সময় মায়াবীর এক বছরের সন্তানকে নানি সুজাতের কাছে রেখে যান তিনি।
সঞ্জীব ও তার তিন বন্ধু তখন বাসাতেই ছিলেন। আর সন্ধ্যা ৬টার দিকে মায়াবীর স্বামী পেলেস্টার চিরান বাসায় ফিরে ঘরে দুজনের লাশ দেখতে পান। এরপর তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। ঘটনার পরে এখন পর্যন্ত সঞ্জীবের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এই বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ঘটনার পর একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করা হয়েছে। পারিবারিক কলহ বা পূর্বশত্রুতাসহ বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখেই কাজ করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে অভিযান শুরু হয়েছে।
দ্রুত আসামীরা গ্রেফতার হবে, এই আশা স্বজনদের।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply