
১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের। বর্ধমানের আসানসোলের একটি রুটির দোকানে কাজ করতেন তিনি।
১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাজীর সিমলা গ্রামের কাজী রফিজউল্লাহ দারোগা কবি নজরুলকে নিয়ে আসেন বাংলাদেশে। সে সময় কাজীর সিমলায় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। তিনি প্রতিভাবান নজরুলকে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন দরিরামপুর হাইস্কুল (বর্তমান নজরুল একাডেমিতে)। ত্রিশাল সদর ইউনিয়নের নামাপাড়া গ্রামের বিচুতিয়া বেপারীর বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা হয় কবির।
আগামী ২৫ মে থেকে তিন দিনব্যাপী ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ১১৯ তম জন্মজয়ন্তী উৎসব পালিত হবে। এই দিনটি ত্রিশালবাসীর জন্য অত্যন্ত গৌরব ও আনন্দের দিন।
“নজরুল জন্মজয়ন্তী ও নজরুল গ্রামীণমেলা” এই প্রাণের উৎসবের প্রতিক্ষায় দিনগুনছে এ অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ। দূর দূরান্তের অনেক স্বজনরা কয়েকদিন আগেই নায়র চলে আসে (বেড়াতে আসে) অনুষ্ঠানমালা ও নজরুল গ্রামীণমেলা উপভোগ করতে।
সেই ১৯৬৫ সাল থেকে প্রতি বছর স্থানীয়ভাবে নজরুলের জন্মজয়ন্তী পালন শুরু করে ত্রিশালবাসী। ১৯৯০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সর্বপ্রথম ত্রিশালে ৭ দিনব্যাপী সরকারিভাবে নজরুল জন্মজয়ন্তী পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে প্রতি বছর জাতীয় পর্যায়ে অথবা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী নজরুলের জন্মজয়ন্তী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এবার জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে জন্মজয়ন্ত্রী উদ্ধোধন করবেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কাজী রফিজউল্লাহ দারোগা বাড়ির আঙ্গিণায় নির্মাণ করা হয়েছে নজরুল পাঠাগার ও জাদুঘর, সংরক্ষণ করা হয়েছে নজরুল যে খাটে শয়ন করতেন সেই খাটটি। পৌর শহরের মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে বিচুতিয়া বেপারী বাড়ির আঙ্গিণায় নির্মিত হয়েছে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র, নজরুল ইন্সটিটিউট এবং সেমিনার কক্ষ। স্মৃতিকেন্দ্র সংলগ্ন যে পুকুরে গোসল করতেন, মাছ ধরতেন কবি, সেই পুকুর ঘাট পাকা করণসহ একটি মনোরম পরিবেশে রুপান্তরিত করা হয়েছে। বিচুতিয়া বেপারী বাড়ির অদূরে শুকনি বিলের পাড়ে নির্মিত হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
শুকনি বিলের পাড়ে যে বটবৃক্ষের নিচে বসে কবি তন্ময় হয়ে বাঁশি বাঁজাতেন তা সংরক্ষিত রয়েছে। সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে নজরুল একাডেমির (সাবেক দরিরামপুর হাইস্কুল) সপ্তম শ্রেণির ওই কক্ষটি, যে কক্ষে কবি নজরুল অধ্যয়ন করেছেন।
কক্ষটির সামনে প্রধান শিক্ষক বিপিন চন্দ্রের স্বরণে লেখা নজরুলের একটি উক্তি মোজাইক করে রাখা হয়েছে। “আমি এক পাড়াগাঁয়ে স্কুল পালান ছেলে, তার উপর পেটে ডুবুরি নামিয়ে দিলেও “ক” অক্ষর খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্কুলের হেড মাস্টারের চেহারা মনে করতেই আজও আমার জল তেষ্টা পেয়ে যায়”। তিন দিনব্যাপী নজরুল জন্মজয়ন্তীতে অগণিত নজরুল প্রেমী ভক্ত, দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, নজরুল গবেষক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের আগমন ঘটবে ত্রিশালে। লাখো মানুষের পদচারণা ও নজরুল মঞ্চে নজরুল সঙ্গীতের ঝংকারে মূখরিত হয়ে উঠে এ অঞ্চল।
তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নজরুল গ্রামীণ মেলা ও বইমেলা উপভোগ করতে বাড়িতে বাড়িতে দুর দুরান্তের স্বজন ও নজরুল ভক্তদের ভিড় জমবে। কবির বাল্যস্মৃতি বিজড়িত দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে ছুটে যাবে কাজীর সিমলা রফিজ উল্লাহ দারোগার বাড়ি, বিচুতিয়া বেপারীর বাড়ি, বাল্যবিদ্যাপিঠ দরিরামপুর হাই স্কুলে। স্কুলের বিশাল মাঠের দক্ষিণ পার্শ্বে নির্মিত নজরুল মঞ্চে দেশবরেন্য কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, নজরুল গবেষকরা আলোচনায় অংশ নেবেন। এ অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ “নজরুল জন্মজয়ন্তী ও নজরুল গ্রামীণমেলা”র এই প্রাণের উৎসবের প্রতিক্ষায় দিনগুনে। ত্রিশালের বিভিন্ন স্থানে কবির গৌরবগাঁথা স্মৃতিকে ধারণ করে কবির নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নজরুল একাডেমি (নজরুলের বাল্য বিদ্যাপিঠ), নজরুল ডিগ্রি কলেজ, নজরুল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, দুখুমিয়া বিদ্যানিকেতন, কাজীর সিমলা নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়, নজরুল মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নজরুল সেনা স্কুল, দুখু চাইল্ড কেয়ার স্কুল, কবি নজরুল ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন, বিদ্রোহী কবি নজরুল স্মৃতি পাঠাগার, কবি নজরুল স্মৃতি সংসদ, কবি নজরুল কবিতা পরিষদ, দুখুমিয়া থিয়েটারসহ আনাচে কানাচে অসংখ্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে উঠেছে।
বাংলা সাহিত্যের অগ্রগণ্য কয়েকজন সাহিত্যিকের তালিকায় প্রথমেই উঠে আসবে কাজী নজরুল ইসলামের নাম। শত বছর পরেও তাঁর বিদ্রোহী কবিতা, তাঁর গান মানুষের প্রাণের সাথে মিশে আছে।এগুলো বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে এসব জিইয়ে রাখতে হবে যতদিন বাংলা ভাষা রয়েছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply