
নেত্রকোনা হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এবছর বোরো (ব্রি ধান-২৮ জাতের) ধানে চিটা হওয়ায় বছরের একমাত্র সম্বল এই বেরো ফসল ক্ষতি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। সারা বছরের একমাত্র এই ফসলের খরচ ওঠা তো দূরের কথা ব্যাংক ঋণসহ মহাজনী ঋণ পরিশোধ নিয়ে চিন্তিত হাওরাঞ্চলের কৃষকরা।
এবছর জেলায় ১লাখ ৮৪ হাজার ৬শ ৫০ হেক্টর জমিতে করা হয়েছে বোরোর ধানের আবাদ। লক্ষমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বোরোর আবাদ হলেও পাকা ধানের ভেতর নেই চাল! যদিও চালের লক্ষমাত্রা ধরা ৭ লাখ ২২ হাজার ৮শ’ মে. টন। নেত্রকোণার মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী উপজেলাসহ ৫টি উপজেলা নিয়ে হাওরাঞ্চল। এসব হাওরে এবার ৮৭ হাজার ৮শ ৮০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে।
অপরদিকে হাওরাঞ্চলে যাতায়াত সুবিধা না থাকায় আক্রান্ত বিবর্ণ ধানের ন্যায্য দাম পাওয়াতো দূরের কথা ব্যাংক ঋণ বা মহাজনদের ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। নেত্রকোণা হাওরাঞ্চলে চিটায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ১২ লাখ বাইশ হাজার পাঁচশ পঞ্চান্ন মেট্রিক টন উঠতি বোরো ফসল।
তবে কলমাকান্দা, কেন্দুয়া ও আটপাড়া উপজেলায় ৭ হাজার ২শ ১ হেক্টর জমির মধ্যে বিআর-২৮ জাতের জমির প্রায় ৮০-৯০ ভাগ রোপনকৃত জমির ৪০-৭০ ভাগ জমির বোরো ফসল নষ্ট হয়েছে। নেত্রকোণা সদরের কেগাতি ইউনিয়নের কুমারপুর ডোবাবিল,পদ্মবিল,মাটিয়ামাড়া বিল এবং কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফ্ফরপুর ইউনিয়নের জালিয়ার হাওর, শনই হাওরে ব্রি-ধান ২৮ জাতের ধানে একই অবস্থা।
মোজাফ্ফরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, জালিয়ার হাওর, শনই হাওরে ব্রি ধান ২৮ ধানে চিটায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। আমার প্রায় ৫০ একর সহ অনেক কৃষকের শত,শত হেক্টর ব্রি ধান ২৮ ধানে চিটায় ৪০ থেকে ৭০ ভাগ জমির বোরো ফসল নষ্ট হয়েছে। কুমারপুর গ্রামের কৃষক নুর আমীন তালুকদার, কৃষক আজিম উদ্দন পিতা মৃত দরবেশ আলী, রাশিদ পিতা মাতাব্বর আলী, আলকাছ পিতা মৃত আ: হাসিম,এলকাছ পিতা মৃত জিন্নত আলী, কৃষক সাহবাজ আলী পিতা মরহুম জাফর আলী,তারা বলেন, এই বছর ১ কাঠা (৮শতক) জমির বোরো করতে ২ হাজার ৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকার সার,মেশিনে হাল খরচ, কামলা দিয়ে ধান কাটা প্রতি কাঠায় ৭শ’ টাকা, ধান মাড়ানো -ভাঙ্গানো ২শ’ টাকা খরচ হয়। চিটায় ক্ষতি হওয়ায় প্রতিকাঠায় ধান পাওয়া যাইতেছে আধমন (২০ কেজি) থেকে বড়জোড় দেড়মন। আক্রান্ত বাজে বর্ণের ধান ৩শ’ টাকার উপরে বেচা যায়না। ধান চাষ করে লাভ কি? । কৃষক সাবাজ আলী ও আজিম উদ্দীন বলেন, ‘আমরার আমও গেছে, চালাও গেছে’।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধদিপ্তররে উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এখন ছয় হাজার হেক্টর জমিতে ধান চিটা হওয়ার তথ্য রয়েছে। গাজীপুরের ধান গবষেণা প্রতিষ্ঠান থেকে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হীরন্দ্রে নাথ র্বমণ, উদ্ভিদ রূপ তত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক র্কমর্কতা তুহিন খাতুন, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো.আশকি ইকবাল খানসহ এক দল বৈজ্ঞানিক এসেছেন। তারা ধান নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করছেন। মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরি হাওরে ঘুরে পরীক্ষা করে দেখছেন এটি কোল্ড ইঞ্জুরি থেকে হয়ছে। আবহাওয়া কার্যালয় থেকে তথ্য নিয়ে দেখা গেছে তখনকার তাপমাত্রা রাতের বেলায় ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি ছিলো। অথচ তাপমাত্রা ১৬ থেকে ২৫ ডিগ্রির নিচে হলে ধানে চিটা হবে।
নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান জানান, মদন মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরীর হাওর এলাকায় বোরো আবাদকৃত জমির পরিমাণ ৪০ হাজার ৫শ’ হেক্টর । এসব হাওরে চিটা আক্রান্ত জমির পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার হেক্টর। তার মধ্যে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সমূলে একবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্ত অন্যান্য উপজেলায় কম-বেশি চিটায় ক্ষতি হয়েছে । আমাদের কৃষি অফিস থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে পরে জানা যাবে।
Leave a Reply