
অসতর্কতায় একের পর এক জীবন যাচ্ছে শ্রমিকের। সিলেটের বিভিন্ন পাথর কোয়ারি এলাকায় অবৈধ ও অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মাটি চাপা পড়ে পাথর শ্রমিকের লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে।
গত বুধবার কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা এলাকায় বশর মিয়ার কোয়ারিতে পাথর উত্তোলনের সময় পাথর চাপায় ৩ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ডিকদারা গ্রামের নজির আলির পুত্র কাচা মিয়া (৩০), জাহির মিয়া ও আফাজ মিয়া। এ ঘটনায় আহত হন ডিকদারা গ্রামের সুক্কুর আলির ছেলে আব্দুল গনি (৫৫)। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গত ১ বছরে বিভিন্ন কোয়ারি এলাকায় পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে মাটি চাপা পড়ে প্রায় ৭০ জনের মতো প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। উল্লিখিত সময়ে শুধু কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা এলাকায় পাথর উত্তোলনকালে মাটি চাপা পড়ে ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেই প্রাথমিকভাবে তড়িঘড়ি করে সংশ্লিষ্টরা নিহত শ্রমিকদের লাশ সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন।
বুধবারও একই কায়দায় ঘটনার পর বিষয়টি পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবগত না করেই লাশ গুমের চেষ্টা করে পাথরখেকোরা। এ ব্যাপারে গর্তের মালিক বশর মিয়া জানান, শাহ আরেফিন টিলায় শ্রমিক নিহতের খবর তার জানা নেই। শাহ আরফিন টিলা পাথর কোয়ারিতে টাস্কফোর্সের অভিযান চলাকালেই বুধবার দুপুর বারোটার দিকে এই গর্তে মাটি ধসের ঘটনা ঘটে। এ সময় হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান কাছা মিয়া। মাটির নিচে চাপা পড়েছিল জাহির ও আফাজের লাশ।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, রাত সাড়ে বারোটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় দুর্ঘটনাকবলিত গর্তের মাটি সরিয়ে জাহির ও আফাজের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, শাহ আরেফিন টিলা বাজার এলাকায় শ্রমিক নিহত হয়েছে। গর্ত মালিকের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে। মটিয়া টিলায় আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি এবং সকল টিলায় মাইকিং করে শ্রমিকদের কাজ না করার জন্য বলা হয়েছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কোম্পানীগঞ্জের কালাইরাগে মাটি চাপা পড়ে ৫ শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে। নিহতদের লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়। লাশ সরিয়ে নেয়ার সময় পুলিশ রাস্তা থেকে উদ্ধার করে। প্রতি ঘটনায় মামলা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যান মূল হোতারা।
স্থানীয়রা জানান, মামলা দায়েরের পর শ্রমিক সরদারকে গ্রেফতার করেই থেমে যায় গ্রেফতারের মিশন। বিভিন্ন সময়ে গর্ত মালিকদের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হলেও কোন গর্ত মালিকদের গ্রেফতার করা হয়নি। গত বছরের ২৩ জানুয়ারি শাহ আরিফিন টিলায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকালে টিলা ধসে ৫ শ্রমিক নিহত হন। তড়িঘড়ি লাশ সরিয়ে ফেলার কারণে পুলিশ পরবর্তীতে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা ও সদর এলাকা থেকে ৫ শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করেছে। ঘটনার দিনই সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীন এ ঘটনার রহস্যোদ্ঘাটনে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাফায়াতকে দিয়ে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় ও এভাবে বার বার গর্ত মালিকরা ছাড় পেয়ে যাওয়ায় প্রাণহানির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply