
নেত্রকোনা সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের মেয়ারগাতী গ্রামে কালভার্টের মূখ বন্ধ করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে সুরাইয়া আব্বাছ ডিএমসিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের চারদিকে পানির। দেখে মনে হয় বিদ্যালয়টি যেন পানির উপর ভাসছে। এতে করে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি দিনদিন কমছে ও লেখাপড়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্ল্টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলো মিটার দূরে নেত্রকোনা- কেন্দুয়া সড়কের পাশে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন নেত্রকোনা- ২ আসনের এমপি আবু আব্বাস এলাকার শিক্ষার পরিবেশ বিস্তারের জন্য এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়টিতে ষষ্ট শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ২৬৫জন এলাকার ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে।
গত দুই বছর ধরে বিদ্যালয়টির বেহালদশা বিরাজ করছে। বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য সড়কের কালভার্টের মূখ বন্ধ করে গত প্রায় তিন বছর আগে জনৈক প্রভাবশালী মাহফুজুর রহমান সিফারি স্থাপন করেছেন। এতে করে গত দুই বছর ধরে সামান্য বৃষ্টি হলেই মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতার কারণে বিদ্যালয়ের চলাচলের রাস্তা, দক্ষিণ পাশের টিন সেডে ষষ্ট, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠদান কক্ষ, শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ পানিতে ডুবে যায়। পানি কমলেও টিন ডে কক্ষ স্যাঁতস্যাঁতে থাকে। এতে করে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হয়। খেলার মাঠ পানিতে ডুবে থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধূলা করতে পারে না। এই অবস্থা বর্ষকালে প্রায় ছয় মাস ধরে থাকে।
এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতার কারনে ইউনিয়নের মেয়ারগাতী, চন্দনকান্দি, ধাওয়াপাড়া গ্রামের বিস্তৃর্ণ এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে করে ওই তিনটি গ্রামের ৫শতাধিক একর জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার কৃষকরা বীজতলা তৈরী করতে পারছেন না। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সাক সবজি ও মৌসুমী ফসল। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি প্রবেশ করছে এলাকার বাড়িতে। পানি না সরার কারণে তিন গ্রামের মানুষের চলাচলে অনুবিধা হচ্ছে।
সরজমিনে বিদ্যালয়ে শনিবার গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রবেশপথে হাটু পানি, খেলার মাঠে পানিতে থৈ থৈ করছে। হাটু পানি মাড়িয়ে কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের দক্ষিনপাশে জরজীর্ণ টিনসেড ঘর। শ্রেণি কক্ষে মাত্র ৪০-৫০জন শিক্ষার্থী স্যাতস্যাতে ঘরে বসে পাঠ গ্রহন করছে। সাথে আছেন শ্রেণি শিক্ষক। তার বসার কোন চেয়ার নেই। বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দিয়ে ডিঙ্গি নৌকায় করে চলাচল করছে এলাকার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা।
সুরাইয়া আব্বাছ ডিএমসিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম, জাকিয়া সুলতানা, মো. পারভেজ উদ্দিন সকলেই বলেন, বিদ্যালয়ের এই অবস্থার জন্য ছাত্রছাত্রী কমে যাচ্ছে। তার পর দীর্ঘদিন পানি জমে থাকার কারণে পানিতে ঝোক রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে বিদ্যালয়ে আসে না। খেলার মাঠে পাপজি জমে থাকায় ছেলে মেয়েরা খেলাধুলা করতে পারছে না। বিষয়টি ফিসারির মালিক দেখার পরও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। একটু ভাড়ি বর্ষণ হলেই পারিতে পাশের টিনসেড ঘরটি তলিয়ে যায়। তখন আরও ঘরে লেখাপড়া করানো সম্ভব হয়না।
এলাকাবাসী এমদাদুল হক বলেন, গ্রামের সামনে (নেত্রকোনা- কেন্দুয়া সড়কের পূর্ব পাশে) ফসলি মাঠে পানি নেই। পানি না সরার কারনে সড়কের ভিতরে বিদ্যালয়টিতে পানি জমে আছে প্রায় তিন মাস ধরে। ভারি বৃষ্টি হলেই পাশের টিনসেড ঘরে পানি প্রবেশ করে ভিটি তলিয়ে যায়।
সুরাইয়া আব্বাছ ডিএমসিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আহমাদুল্লাহ বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে কালভার্টের মূখ বন্ধ করে সিফারি করার কারনে জলাবদ্ধা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যা, উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন ধরনের কাজ হচ্ছে না। এতে করে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে।
মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ আহাম্মেদ ফকির বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে আমি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সিফারির মালিকের সাথে কথা বলেছি। আশা করছি দু’একদিনের মধ্যে সমস্যাটির সমাধান হয়ে যাবে।
সুরাইয়া আব্বাছ ডিএমসিসি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নূরুজ্জামন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা এলাকাবাসী বসেছিলাম। সমস্যাটি নিয়ে আমরা এলাকার লোকজন ইউএনওর কাছে যাওয়ার জন্য চেয়েছিলাম। এরমধ্যে এলাকার কয়েকজন মাতাব্বর দায়িত্ব নিয়েছে ফিসারি মালিকের সাথে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করবে বলে আমাদের ফিনিরয়েছে। সমাধান না হলে পরবর্তীতে অন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফিসারির মালিক মাহফুজুর রহমানের সাথে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি মোবাইল রিসিভ করেন নি।
নেত্রকোনা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল বাতেন বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে জলাবদ্ধতার বিষয়টি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডিআমিরুল ইসলামনাটোর প্রতিনিধি
Leave a Reply