জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের গ্রেপ্তার ও তাদের প্রচারণায় হামলা অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন।শুক্রবার বিকালে রাজধানীর পল্টনে ঐক্যফ্রন্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে এখনও সংবিধান আছে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কারও ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। কারা পুলিশকে এ সব অন্যায় নির্দেশ মানতে বাধ্য করছে তা জানাতে হবে। আমি পুলিশের একাডেমিতে বক্তৃতায় বলেছি, এখনও বলছি কেউ বেআইনি আদেশ মানবে না।
প্রচণ্ড উত্তেজিত কণ্ঠে মুষ্টিবদ্ধ হাতে টেবিল থাপড়ে ড. কামাল বলেন, প্রতিটি হামলার ও গ্রেপ্তারের তথ্য চাই। চারদিকে শুধু এরেস্ট। নো এরেস্ট। আমরা আদালতে যাব, দেখি কারা এরেস্ট করে। সরকারের ক্ষমতার ৫ বছর শেষ হয়ে গেছে। আর ১৬ দিনের মতো আছে। এই ১৬ দিন মাথা ঠাণ্ডা রেখে বেআইনি আদেশ দেওয়া বন্ধ রাখেন। যে ১৬ দিন ক্ষমতায় আছেন মানুষকে মুখ না দেখিয়ে এদিক-সেদিক করে কাটিয়ে দিন। আপনাদের মুখ দেখবো না আমরা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের ও নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশের নিশ্চুপ ভূমিকা ও ধরপাকড় নিয়ে ড. কামাল বলেন, সংবিধানে প্রথম স্বাক্ষর বঙ্গবন্ধুর। তোমরা বঙ্গবন্ধুর আদেশ অমান্য করছো! জেনে রেখো কেউ চিরস্থায়ী নয়। তোমরা ৫০-৫৫ বছর চাকরি করবে। বুঝে নিও, সংবিধান ভঙ্গ করার কাজ করো না। কার আদেশে এমন কাজ করছো তা আমাকে জানাও।
এর আগে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেরার পথে ড. কামালের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় ঐক্যফ্রন্টের নেতা আ স ম আবদুর রবসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের বেশ কয়েকজন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এই ঘটনা সম্পর্কে ড. কামাল বলেন, আওয়ামী লীগের এমপি আসলামুল হকের গুন্ডাবাহিনী ও কমিশনার টিপুর নেতৃত্বে গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। হামলায় আমার, আ স ম আব্দুর রবের, জগলুল হায়দার আফ্রিকের গাড়িসহ ৭-৮টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। রবের গাড়ির চালকসহ ২৫-৩০ জন গুরুতর আহত হন। এসময় শত শত পুলিশকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। আমরা লক্ষ্য করছি প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আওয়ামী লীগ পুলিশের সহায়তায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার, প্রচারণায় বাধা, ভাংচুরের মাধ্যমে সারাদেশে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, যা একটি অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অন্তরায়।
পুলিশের আইজিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আইজিপি সাহেব আপনাকে আমি লিখিতভাবে চিঠি পাঠাবো। আপনার পুলিশদের বিষয়ে যা শুনছি তাতে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আপনার বিষয়ে আমার ভালো ধারণা ছিল। আমি আপনাকে আজকের ঘটনার তথ্য দেবো। ধারণা করছি যে তথ্য দেব আপনি আপনার বিশ্বস্ত লোক দিয়ে সেগুলো তদন্ত করবেন। কথা দিচ্ছি আমরা সব ধরনের সাহায্য করবো। কোনও বেআইনি আদেশ মানা পুলিশের কাজ না। এটা তাদের জানা উচিত। যারা বেআইনি আদেশ দিচ্ছে তারা চিরস্থায়ী নয়। আপনাদের শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে বলছি, কোনও অসাংবিধানিক কাজ করবেন না। তিনি বলেন, সিলেটে শাহজালালের (র.) মাজারে গিয়ে দোয়া করেছি, দেশের মানুষ যা চাচ্ছে তা যেন সাংবিধানিকভাবে ভোগ করতে পারে। আমরা বেআইনি কোনও সুবিধা চাচ্ছি না।
ড. কামাল বলেন, বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছে সেটি শহীদদের জন্য অবমাননাকর। এটি মেনে নেয়া যায় না। যারা এ হামলা করেছে তাদের আমি ভাড়াটিয়া বলবো। ওরা দুই পয়সার জন্য এ কাজ করেছে। আমি তোমাদের উদ্দেশে বলছি- আমি চার পয়সা দেবো, তোমরা সরে যাও। আমরা তো সেখানে কোনও অন্যায় কাজ করিনি। শুধু শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছি। এই হামলাকারীরা কারা? কিছু ভাড়াটে ছোকড়া দুই পয়সার জন্য হামলা করেছে। এদের পয়সা দিয়ে কেনা যায়। আ স ম আবদুর রব, নজরুল ইসলাম খান, মাহমুদুর রহমান মান্না, ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মোহসীন মন্টু প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডিঃ/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply