
কোরবানির ঈদকে ঘিরে বেসামাল হয়ে পড়েছে মসলার বাজার। নতুন কৌশল হিসেবে মাসখানেক আগে থেকেই শুরু হয় এই উল্লম্ফন অবস্থা। কারণ, ঈদের কাছাকাছি সময়ে পণ্যের দাম বাড়লে ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়তে হয়। আর সে জন্যই এবার ঈদ উৎসবের প্রায় মাসখানেক আগ থেকে পণ্যের দাম অল্প অল্প করে বাড়িয়ে আকাশছোঁয়া করে রেখেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে ঈদের বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
যদিও পর্যাপ্ত মজুদ আছে জানিয়ে ১০ দিন আগেও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, কোরবানিতে মসলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে না। সে সময় তিনি দাবি করেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও গরম মসলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি মজুদ রয়েছে এবং বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
কোনো পণ্যের সংকট নেই জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কোনো কারণ বা সম্ভাবনাও নেই। সরকার এ বিষয়ের ওপর দৃষ্টি রাখছে। সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য, সরবরাহ ও মজুদ পরিস্থিতি তদারকি জোরদার করার জন্য ঢাকাসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোরবানির এক সপ্তাহ আগে ঠিক তার উল্টো চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির সময় মসলার চাহিদা বেশি থাকে। এ সুযোগকে কাজে লাগান ব্যবসায়ীরা। এবার রোজার ঈদের পরই গরম মসলার দাম বাড়িয়েছে তারা। কারণ ওই সময়ে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার কিংবা গণমাধ্যমের নজরদারি থাকে না। এই সুযোগটিতে পুরোমাত্রায় লুফে নিয়েছে মসলা ব্যবসায়ীরা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আদা-রসুন ব্যবসায়ীরাও। রাজধানীর কারওয়ানবাজার, চকবাজার ও স্থানীয় খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রোজার ঈদের সময় প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে ১৮৫০ টাকা দরে। সেই এলাচের দাম ঈদের পর তিন দফায় বেড়ে বর্তমানে ২৭৫০ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ১৫ দিন এলাচের দাম বাড়েনি। কোরবানির সময় আর বাড়বেও না। ব্যবসায়ীরা তাদের মতো করে প্রতি কেজিতে ৯০০ টাকা বাড়িয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভালো মানের জাম্বু (বড় দানা) সাইজের এলাচ বর্তমানে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫৫০ টাকা কেজিদরে। খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২৭৫০ টাকা কেজিদরে। এই এলাচই রোজার ঈদের সময় বিক্রি হয়েছে ১৮৫০ টাকা কেজিদরে। মাঝারি সাইজের দানার এলাচ বর্তমান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ টাকা কেজিদরে। খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ টাকা কেজিদরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারওয়ানবাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, গরম মসলার পর্যাপ্ত মজুদ আছে। কোনো সংকট নেই। সে জন্য দাম বাড়ানোরও কোনো যৌক্তিক কারণ নাই। তারপরেও বেড়েছে। এখন আর ঈদ কোরবানিকে কেন্দ্র করে পণ্যের দাম বাড়ে না। উৎসবকে কেন্দ্র করে পণ্যের দাম বাড়ালে ব্যবসায়ী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বদনাম হয়। তাই আগেভাগেই সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে বসে থাকলে সবাই ভালো থাকে।
গরম মসলা ছাড়াও আদা, রসুন, জিরা, লবঙ্গ, আলুবোখারা, গোলমরিচ এবং কিশমিশের বাজারেও একই অবস্থা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে পাটনার জিরা (ভালোমানের) বিক্রি হচ্ছে ৩০৮ টাকা কেজিদরে এবং খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজিদরে। যা এর আগে খুচরা বাজারে বিক্রি হতো ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।
লবঙ্গ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮২০ টাকা কেজিদরে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা। আলু বোখারা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা দরে। গোলমরিচ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা দরে, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। পাইকারি বাজারে কিশমিশ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা।
এ প্রসঙ্গে গরম মসলা আমদানির জন্য বিখ্যাত রাজধানীর চকবাজারের আমদানিকারকরা বলছেন, গরম মসলার প্রতিটি আইটেম বেশি দামে আমদানি করতে হয়েছে বলে দাম বেড়েছে। আমরা যেমন দামে কিনি তেমন দামেই বিক্রি করি। বাইরের বাজারে তো আর আমাদের হাত নেই। কোরবানির ঈদ ঘিরে কোনো মসলার দাম বাড়েনি।
শুধু গরম মসলা নয়, একেবারেই অপরিহার্য নিত্যপণ্য পিয়াজ, রসুন ও আদার দামও বেড়ে আকাশছোঁয়া হয়েছে। রোজার ঈদের পরপরই প্রতিকেজি আদার দাম বেড়ে ১৫০-১৬০ টাকায় স্থির হয়ে আছে। যা জুলাইয়ের প্রথম দিকে বিক্রি হতো ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। একইভাবে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিদরে। যা আগে ছিল ৭০ টাকার মধ্যে। আর দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। যা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বিক্রি হতো ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন খোলা কাগজকে বলেন, এখন পর্যন্ত গরম মসলার দাম যা বেড়েছে, তা সহনীয় পর্যায়ে। ঈদে গরম মসলার দাম বাড়বে না। আর নতুন বাজেটের কারণে বাজারে চিনি ও তেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও, তা এখনো বাড়েনি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply