
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে বর্তমানে সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো শাসক মনে করা হয়। ২০১৫ সালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁর উত্থান ঘটে। গত জুনে মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে ৩২ বছর বয়সী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স (পরবর্তী শাসক) ঘোষণা করা হয়।
সৌদি আরবে প্রথা ভেঙে একের পর এক সংস্কার আনছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, ধর্মীয় সহনশীলতা, নারীর প্রতি উদারতা, তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ, চলচ্চিত্র প্রদর্শন, আঞ্চলিক রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা ইসরায়েলের সঙ্গে হঠাৎ মৈত্রী, শত্রু দেশগুলোর প্রতি আরও কঠোরতা প্রদর্শন—এমন একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনায় তিনি।
সৌদি আরবে বহু বছরের প্রথা ভেঙে নানান সংস্কারের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছেন সৌদি যুবরাজ। প্রশংসা তাঁকে হয়তো আরও বেশি বেশি সংস্কারে উদ্বুদ্ধ করেছে। তবে এর পরিণাম কি ভেবেছেন কেউ? এভাবে একের পর এক একক সিদ্ধান্ত স্বৈরতন্ত্র ও আঞ্চলিক যুদ্ধের পথ তৈরি করছে না তো! ইয়েমেন যুদ্ধে মানবিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করা হচ্ছে তাঁকে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতার জন্য তাঁর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার পর থেকে তিনি একের পর এক সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেন। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ৩৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় করে মুক্তি দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে আছেন ১১ প্রিন্স, বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তিন দশকের নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে ১৮ এপ্রিল থেকে দেশটিতে চলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু হচ্ছে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান নতুন সামাজিক চুক্তির কথা বলছেন, যেখানে আগের মতো স্থবির আমলাতন্ত্র থাকবে না।
সৌদি যুবরাজ ৫০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি প্রযুক্তিনির্ভর শহর স্থাপনের পরিকল্পনা কথা বলছেন, যেখানে নারী-পুরুষ অবাধে চলতে পারবে। আগামী জুন মাস থেকে সৌদি নারীরা গাড়ি চালনার অনুমতি পাচ্ছেন। সৌদি নারীরা এই প্রথম মাঠে বসে খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছেন। একই সময়ে তিনি সৌদির ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা খর্ব করেন। এই পুলিশের অন্যতম কাজ ছিল লোকজন প্রকাশ্যে চলাফেরার সময় নির্ধারিত পোশাক পরছে কি না, বিশেষ করে মেয়েরা, সেটা লক্ষ রাখা। খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের প্রতি আচরণসহ অন্যান্য বিষয়ে গোঁড়ামি কমিয়ে আনা ও আরও সহনশীলতা প্রদর্শন—এমন নীতিও পশ্চিমা বিশ্বে প্রশংসিত হয়।
যুবরাজ সালমান দেশটির প্রতিরক্ষাপ্রধানকে সরিয়ে সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে নিয়ে আসেন নতুন ব্যক্তিদের। যুবরাজের মতে, সামরিক বাহিনীর জন্য বাজেটের ক্ষেত্রে সৌদি আরব বিশ্বের চতুর্থ অবস্থানে থাকলেও সেখানে দক্ষ সেনার সংখ্যা অনেক কম।
সৌদি আরব ও ইসরায়েলের কোনো ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে সম্প্রতি দ্রুতগতিতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটেছে। দুটি দেশই পরমাণু শক্তিধর ইরানকে হুমকি মনে করে। সৌদি আরব ইরানকে প্রতিপক্ষ হিসেবে নিয়ে বন্ধুর হাত বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। গত মাসে ইসরায়েলে প্রবেশে প্রথমবারের মতো কোনো উড়োজাহাজ সৌদি আরবের আকাশ ব্যবহার করতে পেরেছে।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার জন্য গত সপ্তাহে মিসর, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র সফর শুরু করেন। ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় তাঁকে ইয়েমেন যুদ্ধের কারণে মানবিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করে প্লাকার্ড ও ব্যানার প্রদর্শনের মাধ্যমে কিছু সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করে।
বলা হয়, ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের বড় ধরনের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইয়েমেনের বেদনাদায়ক পরিণতি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দেশটির লাখ লাখ মানুষ ভয়াবহ খাদ্যসংকটে ভুগছে।
গত সপ্তাহে লন্ডন সফরের সময় একই কারণে সমালোচনার শিকার হন যুবরাজ সালমান। সৌদি আরবের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সমালোচনা করেন কেউ কেউ।
এর আগে মিসর সফরের সময় যুবরাজের এক মন্তব্যকে ঘিরে ফুঁসে ওঠে তুরস্ক। মিসরের কয়েকটি সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে এক বৈঠকে যুবরাজ ইরান, তুরস্ক ও চরমপন্থী ইসলামি গোষ্ঠীগুলোকে মধ্যপ্রাচ্যের ‘ত্রিভুজ শয়তান’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এতে রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তুরস্ক। পরে অবশ্য তুরস্কে সৌদি দূতাবাস এর ব্যাখ্যা দিয়ে জানায়, যুবরাজ এখানে ‘এই অঞ্চলের কিছু অপশক্তির’ বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এই অপশক্তি হচ্ছে মুসলিম ব্রাদারহুড ও ইসলামি চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply