
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম ওরফে সর্দার (৫২)। যেখানে ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য অনেক কিছু করে থাকেন। কিন্তু তার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি অন্যের বাড়িতে ও বিভিন্ন প্রকল্পের রাস্তায় মাটি কেটে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে তিনি এভাবেই সংসার চালিয়ে আসছেন। তিনি সকলের প্রিয় মুখ হওয়ায় মাটি কাটার লেবার থেকে মাটি কাটার সর্দার হয়েছেন। লেবার সর্দার হওয়ার পর পরই এলাকার সবার অর্থে নির্বাচন করে হেভিয়েট প্রার্থীদের হারিয়ে প্রথম বারের মত ভাদাই ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তার ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য তেমন কোন বরাদ্দ দেয়া হয় না। মাটি কাটার সর্দার হওয়ার কারণে চেয়ারম্যানও তাকে অনেকটা এড়িয়ে চলেন। আবার যে পরিমাণ যত সামান্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তার ওয়ার্ডে পুরোটাই তিনি জনগণের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করে থাকেন। মাটি কাটার অর্থ থেকে অতি কষ্টে কোনো রকমে সংসার চালান তিনি।
অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম। অভাবের কারণে লেখাপড়া করা হয়নি তার। কোন রকম নিজের নামটি লিখতে পারেন তিনি। এক সময় অভাবের কারণেই পরিবারের হাল ধরতে তাকে দিনমজুরী করতে হয়। এরপর দিনমজুরী ছেড়ে দিয়ে মাটি কাটার দলে যোগ দেন সাইফুল ইসলাম। সততায় মুগ্ধ হয়ে সবাই তাকে সর্দারের দায়িত্ব প্রদান করেন। এখন পর্যন্ত তিনি মাটি কাটার লেবার সর্দার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বৈবাহিক জীবনে তিনি ৩ ছেলে ও এক মেয়ের জনক। এক ছেলের বিয়ে দিয়েছন। মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে আর ছোট ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়লেও অর্থের অভাবে লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম। জমি বলতে মাত্র বসতভিটায় ৫ শতক। অনেক সময় অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন তিনি।
আদিতমারী এলাকার বাসিন্দা সুলতান হোসেন বলেন, সাইফুল ইসলাম নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ। একজন ইউপি সদস্য হওয়া সত্ত্বেও মাটি কেটে জীবিকা নির্বাহ করে এমন ঘটনা নজিরবিহীন।
ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খুবই ভালো একজন মানুষ। তার মধ্যে কোনো অহংকার ও হিংসা প্রতিহিংসা নেই। তিনি তার কথা ও ব্যবহারে সবাইকে অতি সহজে আপন করে নিতে পারেন।
ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, মাটি কাটার মজুরী দিয়ে আর মেম্বারী ভাতার টাকায় কোন রকম দিনযাপন করতে হয়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply