
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মিথ্যা তথ্য’ পরিবেশ না করলে সাংবাদিকদের এই আইন নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই।
তিনি বলেন এ আইন নিয়ে তারাই উদ্বিগ্ন হবে, যারা ‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে সংবাদ পরিবেশনের জন্য তৈরি হয়ে আছে।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার বিকেলে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
আইনটি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলে সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার মতে এই আইনটিতে একটি ধারা যুক্ত করার পক্ষে তিনি, আর তা হলো কোনো সাংবাদিক যদি কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে তাহলে তার শাস্তির বিধান থাকা উচিত।
‘যদি কেউ মিথ্যা তথ্য দেয়, তাহলে তাকে সেটা প্রমাণ করতে হবে যে তার তথ্য সত্য,’ তিনি বলেন।
‘যদি সে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়, সেই সাংবাদিক যে সেটা লিখবে, যে পত্রিকা বা যে মিডিয়া সে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া হোক বা ডিজিটাল ডিভাইস হোক যে ব্যবহার করবে বা যে এটা প্রকাশ করবে, তাদের সবাইকে শাস্তি পেতে হবে। এবং যার বিরুদ্ধে লিখবে, তার যে ক্ষতি হবে তাকে কমপেনসেশন দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে বলেন, ১/১১’র পরে ২০০৭ সালে তিনি যখন বন্দি ছিলেন তখন তার দুর্নীতি নিয়ে মিথ্যা খবর প্রকাশ হয়েছিল। পরে এক সময় সেসব খবর যখন মিথ্যা প্রমাণ হলো, ততক্ষণে ‘ড্যামেজ’ হয়ে গেছে। তিনি পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগেরও উল্লেখ করেন।
এক্ষেত্রে যার বিরুদ্ধে মিথ্যা লেখা হলো, তার পরিবারে, নিজের ছেলেমেয়ের কাছে, সমাজে তাকে যে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়, সেটা কে এবং কিভাবে কমপেনসেট করবে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
‘২০০৭ এ আমি যখন বন্দি আমার বিরুদ্ধে যত দুর্নীতির ব্যাপারে যত রকমের তথ্য যেসব পত্রিকা প্রকাশ করেছে, বা এখনো আমাদের অনেকের বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা নিউজ দিয়ে দিল, তদন্ত করে প্রমাণ হলো এটা মিথ্যা। তারপরে কি হয়? যার বিরুদ্ধে হয়, তার জীবন তো শেষ, তার তো ড্যামেজ হয়ে গেল। ’
‘কিন্তু যে পত্রিকা এটা করলো সে কি শাস্তি পেল? তার তো কোন সাজা হলো না।’
তিনি উল্লেখ করেন, মিগ, ফ্রিগেট কেনার কারণে মামলা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে যার কোনটাই প্রমাণ হয়নি।
তবে, তিনি সাংবাদিকদের কয়েকবারই ‘ভয়ের কিছু নেই’ বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন।
যদিও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০০৭ সালে তার দুর্নীতি নিয়ে যেসব সংবাদপত্র মিথ্যা খবর পরিবেশন করেছে, তিনি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতেন, কিন্তু সেসময় নির্বাচন এবং পরে সরকারের দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় তিনি তা করেননি।
‘তবে এখনো সুযোগ আছে, কমপেনসেশন চাইব আমি। আইনের মধ্যে একটু ঢুকায় দিয়ে কমপেনসেশন চাইব আমি।‘—একটু হালকা সুরে যোগ করেন তিনি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারার কারণে সাংবাদিকদের খবর সংগ্রহ এবং কাজের পদ্ধতি বাধাগ্রস্ত হবে এমন আশংকা করে এই আইনটি প্রণয়নের শুরু থেকে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন।
এর একটি ধারায় বলা আছে ডিজিটাল মাধ্যমে সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গ করা হলে ১৪ বছরের সাজা হবে। এর ফলে যে বিষয়টি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জনগণকে জানাচ্ছে না, তা নিয়ে রিপোর্ট করলে একজন সাংবাদিককে শাস্তি পেতে হতে পারে।
একই সঙ্গে পরোয়ানা ছাড়াই আইনের ৪৩ ধারায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তাতেও গণমাধ্যম-কর্মীরা চাপের মুখে পড়বেন বলে আশংকা সংবাদপত্রের সম্পাদকদের পরিষদের।
এছাড়া গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার কর্মীদের আরেকটা বড় উদ্বেগ ২০১৩ সালের আইসিটি আইনের বাতিল হওয়া ৫৭ ধারাটি কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
যেমন নতুন আইনের ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারায় ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, কারো মানহানি কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর মতো বিষয়গুলোকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর সব কয়টি ৫৭ ধারায় ছিল, যেগুলোর শাস্তি ক্ষেত্র বিশেষে তিন থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড।
এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৫৩ ধারায় বলা আছে আইনের ১৪টি ধারা থাকবে অ-জামিনযোগ্য।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply