
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। অসংখ্য নদী আমাদের ভূমিকে ঘিরে রেখেছে আষ্টেপৃষ্ঠে, করেছে মাটিকে উর্বর। তবে এসব এখন বোধহয় শুধুই বইয়ের লেখা। নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে ক্রমশই, পানি গিয়ে ঠেকছে তলানিতে।
সিরাজগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদী শুকিয়ে এখন খালে পরিণত হয়েছে। ফলে হাজার হাজার নৌ-শ্রমিক এবং জেলেরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।
জেলার কাজিপুর, চৌহালি, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার অন্তত ২০টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত রাক্ষসী যমুনা নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এর বুকজুড়ে জেগে উঠেছে হাজার হাজার একর আবাদি জমি। জমির মালিকরা জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করে সংসার পরিচালনা করছেন। কিন্তু ভরা নদীতে যে সব নৌ-শ্রমিক নৌকা চালিয়ে এবং জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো সেই নৌ-শ্রমিক ও জেলেরা আজ বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা এখন স্ত্রী-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
নদীতে পানি না থাকায় নৌ-শ্রমিক এবং জেলেরা তাদের উপকরণ নৌকা এবং জাল বিক্রি করে দিয়ে ভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই পেশায় হাজারও শ্রমিক দাদন ব্যবসায়ী এবং এনজিও’র কাছ থেকে চড়া ঋণ নিয়ে বাড়িতে খোরাকি দিয়ে শহরে পাড়ি জমাচ্ছেন। অনেকে রিকশা, ভ্যান, টেম্পু, সিএনজি, বাস-ট্রাক হেলপার, গার্মেন্টস শ্রমিক, রাজমিস্ত্রির কাজে জড়িয়ে পড়েছেন।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের রাজিব, সুলতান, সাদেক আলী, কাজিপুর ইউনিয়নের জেলে বিজয় দাস, নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের পরিমল, শুভগাছা ইউনিয়নের জেলে বিময়ল ও বিকাশ কুমার বলেন, ‘যমুনা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন আর জাল ফেলে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে আমরা এ পেশা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছি।’ কাজিপুরের মেঘাই নৌ-ঘাটের নৌ-শ্রমিক আল-আমিন, বাদশা, সাইফুল ইসলাম, আজিবার, বাবলু, বেলাল, নাটুয়ারপাড়া নৌ-ঘাটের সেলিম, জামাল, হাসেম ও নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ থেকে ১০-১২ বছর আগে গোটা বছরই নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন যমুনা নদী বিভিন্ন শাখা নদী এবং নালায় পরিণত হয়েছে। নৌকা চালানোর মত কোন জায়গা নেই। তাই নৌকা বিক্রি করে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় কাজ করে সংসার পরিচালনা করছি।’
বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি ও কাজিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বকুল সরকার জানান, যমুনা নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় জেলার চরাঞ্চলের কয়েক হাজার নৌ-শ্রমিক এবং জেলে আজ বেকার হয়ে পড়েছে। ওই সব নৌ-শ্রমিক ও এবং জেলেরা বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছেন। যমুনা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনলে হয়তো ওই সব শ্রমিক পুনরায় তাদের পেশায় জড়িয়ে পড়তে পারবে।
এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের ঐতিহ্য নদী, একসময় হারিয়ে যাবে। বিলীন হয়ে যাবে অযত্নে-অবহেলায়। এ জন্য নদী খনন করা জরুরি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply