
রাসপূর্ণিমা উপলক্ষে বর্ণিল সাজে কান্তজী মন্দির।। বৈচিত্রময় ও নান্দনিকতার ছোঁয়ায় আমূল সংস্কারের পর দৃষ্টিনন্দন কান্তজিউ মন্দিরে রাস পূর্ণিমা মেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত এখন কান্তনগর। দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে ঐতিহাসিক এই মন্দির দেখতে আসছেন পর্যটকরা।
প্রাচীণ স্থাপত্যের অনন্য এ নিদর্শনগুলো দেখে পর্যটকদের চোখে-মুখে রীতিমত তৃপ্তির ছাপ দেখা যায়। দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেপা নদীর তীরে কান্তনগর এলাকায় প্রাচীন টেরাকোটার অনন্য নিদর্শন কান্তজিউ মন্দির অবস্থিত। কালিয়াকান্ত জিউ অর্থাৎ শ্রী-কৃষ্ণের বিগ্রহ অধিষ্ঠানের জন্য মন্দির নির্মিত হয় বলেই এই মন্দিরের নাম কান্তজিউ মন্দির।
প্রায় ১ মিটার (৩ ফুট) উঁচু এবং প্রায় ১৮ মিটার (৬০ ফুট) বাহু বিশিষ্ট প্রস্তর নির্মিত একটি বর্গাকার বেদীর উপর এই মন্দির নির্মিত। শোনা যায়, বেদীর পাথরগুলো আনা হয়েছিল প্রাচীন বানগড় (কোটিবর্ষ দেবকোট) নগরের ভেঙ্গে যাওয়া প্রাচীন মন্দিরগুলো হতে। পাথরের ভিত্তি বেদীর উপর মন্দিরটি ইটের তৈরী। বর্গাকারে নির্মিত মন্দিরের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ মিটার (৫২ ফুট)। মন্দিরের চারিদিকে রয়েছে বারান্দা।
প্রত্যেক বারান্দার সামনে রয়েছে ২টি করে স্তম্ভ। স্তম্ভগুলো বিরাট আকারের এবং ইটের তৈরী। স্তম্ভ ও পাশের দেওয়ালের সাহায্যে প্রত্যেক দিকে ৩টি করে বিরাট খোলা দরজা তৈরী করা হয়েছে। বারান্দার পরেই রয়েছে মন্দিরের কামরাগুলো। একটি প্রধান কামরার চারিদিকে রয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট কামরা। ৩ তলা বিশিষ্ট এই মন্দিরের নয়টি চূড়া ছিল।
এজন্য এটিকে নবরন্ত্ন মন্দিরও বলা হয়ে থাকে। ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দে ভূমিকম্পে মন্দিরের চূড়াগুলো ভেঙে গেছে। মন্দিরের উচ্চতা ৭০ ফুট। মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদীর শিলালিপি হতে জানা যায়, দিনাজপুরের জমিদার মহারাজা প্রাণনাথ রায় (মৃত্যু ১৭২২ খৃঃ) তার শেষ জীবনে মন্দির তৈরীর কাজ শুরু করেন এবং তার মৃত্যুর পর তার আদেশ অনুসারে দত্তক পুত্র মহারাজা রামনাথ রায় এই মন্দির তৈরীর কাজ শেষ করেন ১৭৫২ খৃষ্টাব্দে।
ইট দ্বারা তৈরী এই মন্দিরের গায়ে পোড়ামাটির চিত্রফলকের সাহায্যে রামায়ণ-মহাভারতের প্রায় সব কয়টি প্রধান কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। সে সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের গীতার বাণী ও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের
বিবরনও তুলে ধরা হয়েছে। অতি সুন্দর ও কারুকার্যময় এই কান্তজীর মন্দির। সারা উপমহাদেশেও আছে কিনা সন্দেহ। ঐতিহাসিক বুকানন হ্যামিলটনের মতে, এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরতম মন্দির। কান্তজিউ বা শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ ৯ মাস এই মন্দিরে অবস্থান করে এবং রাস পূর্ণিমায় মাস ব্যাপী তীর্থ মেলা বসে। দেশ-বিদেশ হতে বহু পূণ্যার্থী আসেন এই মেলায় এবং মন্দিরটি দেখতে। টেরাকোটা অলঙ্করণের বিস্ময় জাগানিয়া কান্তজিউ মন্দিরকে ঘিরে একটি পর্যটন এলাকা গড়ে তুলতে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা সফলতা লাভ করে। এখন সেখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসছেন মন্দির পরিদর্শনে। পর্যটকদের ভীড়ে এলাকায় নতুন প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply