
৬ জুন জাতিসঙ্ঘ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) ও জাতিসঙ্ঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সাথে একটি চুক্তিতে সই করে মিয়ানমার সরকার। চুক্তির ফলে সংস্থা দু’টি দেশটিতে অনেক বিলম্বিত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হতে পারবে।
নতুন এই চুক্তির ব্যাপারে আনাদোলু এজেন্সিকে দেয়া এক গবেষণাকর্মে ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের কৌশলগত বিষয়ক আহ্বায়ক মাউঙ যারনি এবং লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক ও সামাজিক গবেষণা বিভাগের পিএইচডি স্কলার নাটালি ব্রিনহ্যাম মন্তব্য করেন, মিয়ানমারের গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের নিরাপদে নিজ দেশে ফেরার ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তা দাবি করছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘ-মিয়ানমার যে চুক্তি করেছে তা অপর্যাপ্ত উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেছেন। তারা মনে করেন, রোহিঙ্গাদের এভাবে অনিরাপদ প্রত্যাবর্তন তাদেরকে আরেকদফা গণহত্যার শিকারে পরিণত করতে পারে।
তারা বলেন, মিয়ানমারের গণহত্যা থেকে পালিয়ে বাঁচা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১০ লাখ আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। নাইপিডুর সাথে জাতিসঙ্ঘের দু’টি সংস্থার এ চুক্তির খবরেও তারা দেশে ফিরতে খুব একটা আগ্রহী নয়। বরং তারা রাখাইনে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা বাহিনীর গ্যারান্টি চেয়েছে। ৬ জুনের ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে, জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলো শরণার্থীদের রক্ষা ও উন্নয়নে কাজ করবে। তবে মিয়ানমারের চূড়ান্ত নিরাপত্তার জন্য এ চুক্তির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চুক্তির কোনো ক্ষেত্রেই ফিরতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের শারীরিক নিরাপত্তা বিধানের কোনো উল্লেখ নেই। এমনকি রোহিঙ্গারা ফেরত যাওয়ার পরও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে সংখালঘু হিসেবে গ্রহণ করা হবে কি না, চুক্তিতে তারও কোনো নির্দেশনা নেই।
জাতিসঙ্ঘের দুই সংস্থার সাথে চুক্তি সইয়ের পরও বৌদ্ধপ্রধান দেশটিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাশা এক্ষেত্রে খুবই কম। এক্ষেত্রে দেশটির প্রভাবশালী জেনারেল মিন অং হ্যালাইঙ্গ প্রকাশ্যে রোহিঙ্গাদের গণহত্য সম্পর্কে বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতিই একটি অপূর্ণ কাজ। তার এ মন্তব্যের পর যারনি ও ব্রিনহ্যাম বলেন, মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ারও ভয় রয়েছে রোহিঙ্গাদের। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে যে হাজার হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের ব্যাপারেও জাতিসঙ্ঘের এসব সংস্থা উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি; বরং এসব ক্ষেত্রে তাদের লজ্জাকর রেকর্ড রয়েছে। ইউএনএইচসিআর ১৯৭৮ সালে প্রথম এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু তারাও কেবল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘটনা ঘটতে দেখেছে।
যারনি ও ব্রিনহ্যাম বলেন, মিয়ানমার ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘের বিশেষ করে ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপির ভূমিকা বা খ্যাতি অনেক নিচের দিকে। এ অবস্থায় শরণার্থীদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোটা হবে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এক্ষেত্রে তাদেরকে আবারো গণহত্যা, বন্দীশিবিরে আটক অথবা অনাহারে রেখে কষ্ট দেয়ার মতো অত্যাচারের মুখে পড়তে হতে পারে। এ কারণে বিশ্লেষকরা এক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলোকে সুরক্ষা ও মানবাধিকারের বিষয়টি আগে নিশ্চিত করতে আহ্বান জানান।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর পুলিশ হামলা শুরু করলে সেখান থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যায় এবং বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে প্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে সাত লাখ বলে উল্লেখ করে অ্যামনেস্টি। ডক্টর উইদাউট বর্ডার জানায়, হামলার প্রথম মাসেই নয় হাজার ৪০০ রোহিঙ্গা নিহত।
রোহিঙ্গাদের যে বিশাল চাপ আমাদের জনবহুল দেশটিতে এসে পড়েছে, তা থেকে অচিরেই মুক্তি নেই- এটি স্পষ্ট। তবে এতে আমাদের দেশ যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা অপূরণীয়। কোনো দেশের পাঠানো কোনো সাহায্যেই এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কষ্টসাধ্য এবং কিছুক্ষেত্রে অসম্ভবও বটে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply