আলোচিত দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হবার পর রাস্তায় নেমে আন্দোলন প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা। এরপরই ডিএমপির পক্ষ থেকে ঘোষনা আসে ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের।
এরপর থেকে পালিত মূল সাত দিনের সঙ্গে অতিরিক্ত তিন দিনসহ মোট ১০ দিনের ট্রাফিক সপ্তাহ গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশের পাশাপাশি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষও (বিআরটিএ) বিশেষ অভিযান চালিয়েছে। তবে সড়কে নৈরাজ্য বন্ধ করা যায়নি। গত ১০ দিনে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৭৩ জন।
ট্রাফিক সপ্তাহের ১০ দিনে সারা দেশে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ২৪৯টি। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৭ কোটি ৮ লাখ ১৪ হাজার ৩৭৫ টাকা। এ সময় ৭৪ হাজার ২২৪ জন চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আটক করা হয়েছে ৫ হাজার ৪১৮টি যানবাহন। মামলাগুলোর অধিকাংশ হয়েছে রাজধানীতে। জরিমানার তিন-চতুর্থাংশ আদায় হয়েছে রাজধানীতে। মামলা ও জরিমানার পাশাপাশি যানবাহনের চালক ও পথচারীদের উদ্দেশে প্রচার করা হয় সচেতনতামূলক বার্তা।
১০ দিনে বিআরটিএ মামলা করেছে ৪৪৪টি। জরিমানা আদায় করেছে ৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৮৯ জন দালালকে। চালক, পথচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
রাজধানীর সড়কে চলা দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ৭ বা ১০ দিনের অভিযানে বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন নগরবিদেরা। নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, সড়কে বিশৃঙ্খলা গুরুতর পর্যায়ে চলে গেছে। এ খাতে প্রচণ্ড রকম দুর্নীতি।
নাগরিকদের মধ্যে আইন না মানার প্রবণতাও প্রবল। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। যানবাহন মালিক, চালক, পথচারী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী-সবার মধ্যে আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
কাল রাজধানীর সাতটি ব্যস্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চালক ও পথচারীরা হরহামেশা ট্রাফিক আইন অমান্য করছেন। অভিযানের কারণে সড়কে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা কম থাকলেও যানজট ছিল তীব্র।
যাত্রীদের ভোগান্তি ছিল বেশি। চালকেরা যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী তুলেছেন। চলন্ত গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়েছেন। ফুটপাতে মোটরসাইকেলের উৎপাত আগের মতোই ছিল। পথচারীরাও খুশিমতো ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হয়েছেন।
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করছিলেন চার ট্রাফিক সার্জেন্ট। ট্রাফিক সদস্যরা একের পর এক মোটরসাইকেল, কাভার্ড ভ্যান থামাচ্ছিলেন। সার্জেন্টরা মামলার পরে মামলা দিয়েই যাচ্ছিলেন। কোনো মোটরসাইকেলের আরোহীর হেলমেট নেই, কোনো বাহনের চালকের লাইসেন্সের মেয়াদ নেই।
শ্যামলীর শিশুমেলা এলাকায় দেখা যায়, মোহাম্মদপুর থেকে আবদুল্লাহপুরগামী প্রজাপতি পরিবহনের একটি বাস সড়কের মাঝখানে যাত্রী নামাচ্ছে। চালকের সহকারীরা চলন্ত বাস থেকেই যাত্রীদের নামতে বাধ্য করছেন।
শাহবাগ মোড়ে রাস্তা পারাপারের জন্য তিন দিকে তিনটি পদচারী-সেতু আছে। এর কোনোটিতেই পথচারীদের পা পড়ে না। দেখা যায়, ব্যস্ত সড়কে যানবাহনের সামনে দিয়েই লোকজন সড়ক পার হচ্ছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম ও গণসংযোগ) মো. সোহেল রানা বলেন, এত মামলা ও জরিমানার পরও জনগণের মধ্যে আইন অমান্য করার প্রবণতা রয়ে গেছে। রাতারাতি এই অভ্যাস পরিবর্তন সম্ভব নয়।
নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে যতই আন্দোলন বিক্ষোভ হোক, দিন শেষে এর প্রতিকার রয়েছে আমাদের হাতেই। আমরা সকলে যদি নিয়ম মেনে, ট্রাফিক সিগন্যাল দেখে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে চলাচল করি তবেই এইসকল দুর্ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এম ইউ
Leave a Reply