
কার্বন ডাই অক্সাইড বা কার্বন মনোক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন নিয়ে উদ্বেগের যাবতীয় আতঙ্কের মধ্যে নতুন সংযোজন এবার সালফার ডাই অক্সাইড। মার্কিন সংস্থা নাসার সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত এই গ্যাস নির্গমনে বিশ্বে এক নম্বর স্থান দখল করেছে। এবং বিষয়টি মোটেই কৃতিত্বের নয়। এতদিন সালফার ডাই অক্সাইড দিয়ে বাতাস দূষিত করায় এক নম্বরে ছিল ভারতেরই প্রতিবেশী চীন। নাসার নেয়া উপগ্রহ চিত্র দেখাচ্ছে, ছবিটা বদলেছে।
আর সেই সঙ্গে বেড়েছে উদ্বেগও। এর ফলে যেমন অ্যাসিড বৃষ্টি বাড়তে পারে, সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবে চাষবাসও। আর সামগ্রিকভাবে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর সালফার ডাই অক্সাইডের (এসও২) বিরূপ প্রভাব তো পড়বেই। আর এর কারণ? গত এক দশকের তথ্যসমৃদ্ধ নাসার রিপোর্টই বলছে, অত্যধিক পরিমাণে কয়লা পোড়ানোর জন্যই ভারত এই গ্যাস নির্গমনে এক নম্বরে পৌঁছে গেছে।
নাসার রিপোর্ট যারা তৈরি করেছেন তাদের একজনের বক্তব্য, ভারতে শহর তার সীমা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। যেহেতু ভারতের শক্তি উৎপাদনে এখনো মূল ভরসা সেই তাপবিদ্যুৎই, তাই কয়লা পোড়ানোর পরিমাণও অত্যন্ত বেশি। কাজেই সামগ্রিকভাবে পরিবেশের ওপর চাপ পড়াটা স্বাভাবিক।
এই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কয়লা ব্যবহার হয় চীন এবং ভারতেই। অর্থাৎ, যত বেশি কয়লা পুড়বে, ততই তৈরি হবে সালফার ডাই অক্সাইড। সাম্প্রতিক রিপোর্ট কিন্তু দেখাচ্ছে, চীন প্রায় ৭৫ শতাংশ এসও২ নির্গমন কমিয়ে ফেলেছে। আর সেটা হতে শুরু করেছে গত ২০০৭ সাল থেকেই। সেখানে গত ১০-১৫ বছরে ভারতের সালফার ডাই অক্সাইড নির্গমনই বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। চীনের দূষণেরও অন্যতম কারণ কিন্তু সেখানকার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বিভিন্ন কারখানা, যেখানে জ্বালানি হিসেবে কয়লাই ব্যবহার হয়। বিষয়টা কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে বুঝেই ২০০০ সাল থেকে দূষণের জন্য দায়ী সংস্থাগুলিকে মোটা অর্থ জরিমানা করতে শুরু করে, আর পাশাপাশি কতটা পরিমাণ এসও২ নির্গমন করা যাবে, সে লক্ষ্যমাত্রাও বাঁধতে শুরু করে।
ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের (ডব্লুআরআই) ভারতীয় শাখার এনার্জি প্রোগ্রামের ডিরেক্টর ভরত জয়রাজ বলছিলেন, ‘চীন সত্যি খুব উল্লেখযোগ্যভাবে এসও২ এমিশন কমিয়ে ফেলেছে। তার জন্য যেমন কৃতিত্ব তাদের এই সংক্রান্ত নীতির, তেমনই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির।’
সত্যিই তাই। না হলে যে চীনে কয়লার ব্যবহার গত এক দশকে অন্তত ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া, সেখানে গ্রিনহাউস গ্যাসে এভাবে বেড়ি পরানো সম্ভব হতো না। বিশেষ করে এসও২ নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করেই যে তারা সাফল্য পেয়েছে, সে কথা স্বীকার করা হয়েছে নাসার ওই সমীক্ষা রিপোর্টেও। তবে আর একটা কথাও সত্যি, চীন কিন্তু এখনো দূষণের জন্য দায়ী বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারেনি। তাই দূষণও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সালফার ডাই অক্সাইডে নিয়ন্ত্রণ মানে বায়ুদূষণের মাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশে কাটছাঁট করা। যা মোটেই যথেষ্ট নয়।
এসও২ নির্গমন রুখতে ভারতে কিন্তু এখনো তেমন কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আর শুধু দূষণ নিয়ন্ত্রক নীতি থাকলেই হবে না, তাকে ঠিকমতো মেনে চলতে হবে। যা ভারতে হয়ে ওঠে না। নাসার এই রিপোর্টে অবশ্য ভারতের পক্ষে কিছুটা স্বস্তির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের যে যে জায়গায় এসও২ সবচেয়ে বেশি বাতাসে মিশছে, সেইসব জায়গার জনসংখ্যা অনেক কম। এমনকী আশপাশেও ঘনজনবসতিপূর্ণ এলাকা নেই। তাই এসও২ নির্গমনের ক্ষতিকারক দিক ভারতে বিপুল জনসংখ্যার উপর তেমন প্রভাব ফেলছে না।
তবে রিপোর্ট প্রস্তুতকারী বিশেষজ্ঞের কথায়, ভারতে শহরের বিস্তার দ্রুত হচ্ছে। অর্থাৎ খুব স্বাভাবিকভাবে বিদ্যুতের চাহিদা অদূর ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। ফলে এসও২ নির্গমন এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভবিষ্যতে ভারত এর ক্ষতিকারক দিক কিন্তু এড়িয়ে যেতে পারবে না। ভরত জয়রাজ বলছিলেন, ‘দূষণের জন্য উপযুক্ত নীতি তৈরি এবং তা মেনে চলা যেমন প্রয়োজন, তেমনই আমাদের অনেক বেশি করে বিকল্প শক্তির দিকে ঝুঁকতে হবে। কয়লার ব্যবহার কমানো ছাড়া আমাদের তো আর কোনো উপায় নেই! সেটাই ভারতের টার্গেট। আর নাসার রিপোর্টের কথা যদি বলেন, তাহলে আমাদের কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের (সিপিসিবি) সঙ্গে এই সমীক্ষার তথ্যে কিন্তু কিছুটা হলেও ফারাক আছে। আর সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। নাসা স্যাটেলাইটের ছবি এবং তার বিশ্লেষণ থেকে এই সিদ্ধান্তে এসেছে। আর সিপিসিবি ভূ-ত্বক থেকে দূষণের তথ্য জোগাড় করেছে। তার গড় করেছে। দু’টিই কিন্তু ঠিক। তবে আমরা যেভাবে বিকল্প শক্তির দিকে এগিয়ে চলেছি, তাতে এই সব সমস্যার সমাধানই আগামী দিনে সম্ভব বলে মনে করি। শুধু ২০২২ সালের ১৭৫ গিগাওয়াট বিকল্প শক্তির টার্গেট নয়। ওটা তো একটা সংখ্যা মাত্র। আসল হলো স্থিতিশীল উন্নয়ন। সেটা ভারতে খুব ভালোভাবেই হচ্ছে।’
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডিঃ / ক.আ।
Leave a Reply