
সুন্দরবনে শিল্পায়ন বন্ধ করতে আহ্বান জানালো জাতিসংঘ কমিশন। এর মানবাধিকার সংস্থাটি এ বিষয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে প্রাণীদের অনেকগুলো প্রজাতি বিপন্নের মুখোমুখি হতে পারে।
বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে অবস্থিত সুন্দরবনকে বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক আশ্চর্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে আসছে। এটি প্রাকৃতিক জলাভূমি রক্ষাসংক্রান্ত রামসার কনভেশন এবং ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত।
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের আপত্তি থাকার পরও বাংলাদেশ সুন্দরবন এলাকায় ৩২০টির বেশি শিল্পায়ন প্রকল্প অনুমোদন করেছে। যার মধ্যে রয়েছে বৃহদায়তনের রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
মানবাধিকার সংস্থার বিশেষ দূত জন এইচ নক্স বলেন, ‘সুন্দরবনে দ্রুত গতির শিল্পায়ন বেঙ্গল টাইগার, গঙ্গা নদীর ডলফিন ও অন্যান্য বিপন্ন প্রজাতির অভাবনীয় বাস্তুসংস্থানকেই কেবল হুমকির মুখে ফেলছে না, সেই সঙ্গে গুরুতর ঝুঁকিতে ফেলছে ৬৫ লাখ মানুষের মানবাধিকার, যাদের জীবন, স্বাস্থ্য, গৃহায়ণ, খাদ্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সরাসরি নিরাপদ, সমৃদ্ধ ও টেকসই সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে।’
সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের ভেতরে কোনো শিল্পায়নের অনুমতি না দিতে ২০১৭ সালে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তারপরও সরকারের অনুমোদন দেওয়া চলমান আছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। সুন্দরবনের বিশৃঙ্খল শিল্পায়নের ঝুঁকি বিশ্বব্যাপী পরিবেশ যে ঝুঁকির মোকাবেলা করছে তার একটি নিদর্শন বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত।
নক্স বলেন, ‘অবশ্যই সারা বিশ্বের মানুষের মতো বাংলাদেশের মানুষেরও অর্থনৈতিক কল্যাণের প্রয়োজন। তবে পরিবেশগত ক্ষতি উপেক্ষা করে স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক লাভ চাওয়ার মানে মরীচিকার পেছনে ছুটে চলা। টেকসই পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক অর্জন টেকসই হবে না।
তিনি বলেন, ‘সত্যিকারের টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশের সুরক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। আর তা নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশসংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি করতে হবে। সেই সাথে প্রস্তাবিত শিল্পায়ন প্রকল্পের জন্য যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের কথা সরকারকে অবশ্যই শুনতে হবে।
জন এইচ নক্স আরও বলেন, ‘যারা উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাদের প্রায়ই উপেক্ষা করা হয় বা রাষ্ট্রের শত্রু বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু আসলে তাদের টেকসই উন্নয়নের বীর সেনানী বলে বিবেচনা করা দরকার।’ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন রক্ষায় সবারই নজর রয়েছে বলে মন্তব্য করেন নক্স।
সুন্দরবনে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হলে হয়তো ক্ষণিকের জন্যে কিছু লাভ ঘরে আসবে, তবে এটি হবে দেশের জন্যে দীরঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ। এ বিষয়ে তাই সরকারের আরো একটু ভাববার অবকাশ রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এম ইউ
Leave a Reply