
কখনো কখনো মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। ন্যায়-অন্যায় বোধ, যেটুকু মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে করে তোলে ভিন্ন, সেটা হারিয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে। মানুষ তখনই মানুষের স্তর থেকে নেমে আসে নিম্নস্তরে। নিজের বিবেক-বুদ্ধি, জ্ঞান বিসর্জন দেয় অন্ধ হয়ে।
জঙ্গীবাদ অন্যায়ের পথে এমনই এক ধাপ, যেখানে এগিয়ে গেলে পেছনে ফিরে তাকাবার উপায় বন্ধ হয়ে যায়- ফিরে আসা তো বহুদুরের বিষয়। জঙ্গীবাদের ধ্যান-ধারনা নিয়ে এর মধ্যে বলি হয়েছেন বহু তরুণ-তরুণী, বলি দিয়েছেন অন্যকে।
সম্প্রতি মোমেনা সোমা তারই এক দূর্বিষহ প্রমাণ।
গত শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন এ এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে আহত করেন তিনি। এ অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
খবর পেয়ে সোমবার রাতে মোমেনাদের মিরপুরের বাসায় যান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা। উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা। সেখানে আচমকাই হামলার শিকার হন পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশের উপর এই হামলা করেন মোমেনা সোমার ছোট বোন আসমাউল হোসনা। পরে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মিলে ধারনা করা কিছু তথ্যের সত্যতা। জানা যায়, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০১৫ সালেই তুরস্ক হয়ে সিরিয়া যেতে চেয়েছিলেন মোমেনা। তুরস্কের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও হয়েছিলেন তিনি। ভিসা না পাওয়ায় যাবার সুযোগ হয় নি আর।
আরো জানা গেছে, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সিরিয়ায় গিয়ে ফিরে আসা কামরুস সালাম এবং সিরিয়ায় নিরুদ্দেশ মেরিন ইঞ্জিনিয়ার নজিবুল্লাহ আনসারীর সাথেও যোগাযোগ ছিল মোমেনা সোমার।
পুলিশের কর্মকর্তারা সংবাদ মাধ্যমে বলেন, দুই বোনই অনলাইনে জঙ্গিবাদের ধ্যান-ধারণায় নিজেদের যুক্ত করে ফেলেন। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটাবার কথা ছোটবোনকে আগেই জানিয়েছিলেন মোমেনা। বাসায় পুলিশ এলে তাদের উপর হামলার নির্দেশও তাঁরই ছিলো।
পুলিশের কর্মকর্তারা আরো জানান, আনসারীর সাথে সম্পর্ক ছিল মোমেনার। দুজনের বিয়ে হবার কথা ছিল ২০১৪ সালের শেষ দিকে। আনসারীর পরিবার শেষ পর্যন্ত না চাওয়ায় বিয়েটা হয় নি।
জঙ্গিবাদ এখন একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, বলে দায় এড়ানো যাবে না। এটি এখন সুপরিকল্পিত কিছু ঘটনার সমন্বয়ে করা হচ্ছে। অল্পবয়সী তরুন-তরুনীদের মস্তিষ্কে দিয়ে দেয়া হচ্ছে জঙ্গিবাদের বিষমন্ত্র। বহু তরুনেরা পথ হারিয়ে চলে যাচ্ছে ভুল পথে, বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যায়। তারা নিমজ্জিত হচ্ছে হতাশায়। এইসব হতাশায় ডুবে থাকা তরুনদের দিকভ্রান্ত করে নিয়ে যাওয়াটা খুব সহজ। এই সুযোগটিকেই কাজে লাগাচ্ছে জঙ্গিবাদ মতাদর্শের কর্মীরা।
জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ায় তাই শুধু ব্যক্তিই দায়ী নয়। অনেক ক্ষেত্রে দায়ী সামাজিক সমস্যা ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply