
হাইকোর্টে জামিন নিতে আসা বরখাস্তকৃত ডিআইজি মিজানকে আদালতের গ্রেফতারের নির্দেশের পর তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার বিকাল ৫টা ৫৫ মিনিটের সময় পুলিশি পাহাড়ায় গ্রেফতার ডিআইজি (বরখাস্ত) মিজানকে শাহবাগ থানায় আনা হয়। তবে থানায় অন্য বন্দিদের মতো হাতে হাজতে থাকতে হচ্ছে না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে একটু ‘সম্মান পাচ্ছেন’ তিনি। সোমবার বিকাল ৫টা ৫৫ মিনিটের সময় পুলিশি পাহাড়ায় গ্রেফতার ডিআইজি (বরখাস্ত) মিজানকে শাহবাগ থানায় আনা হয়।
এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে জড়ো হন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসানের সঙ্গে কথা হয়নি। কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি শাহবাগ থানা পুলিশ। এছাড়া কোন মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। আইনানুযায়ী গ্রেফতার হওয়া আসামিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালতে তুলতে হয়। সে হিসেব অনুযায়ী আগামীকাল (মঙ্গলবার) তাকে বিচারিক আদালতে তোলা হতে পারে।
জানা যায়, অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে নারীকে বিয়ে করা, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাকে গ্রেপ্তার করা, নারী উপস্থাপিকা ও তার স্বামীকে হত্যার হুমকি দেওয়া, দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদ অর্জন ছাড়াও নানা অভিযোগ ডিআইজির বিরুদ্ধে। আয়েশে থাকতে ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট করেছেন। যেদিন যেখানে খুশি থেকেছেন। তবে আপাতত সব আরাম-আয়েশ শিকেয় উঠেছে। হাইকোর্টের নির্দেশে থানা হাজতে চার দেয়ালের মাঝে বন্দি সমালোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এমনিতে থানায় কাউকে বন্দি করা হলে তাকে সাধারণ হাজতিদের (পুরুষ) কক্ষে রাখা হয়। তোষক-জাজিমের ব্যবস্থা না থাকলেও ফ্লোরে থাকে কম্বল বা কাঁথা। যেটা পেরেই ঘুমাতে হয়।
কিন্তু মিজানের ক্ষেত্রে তেমনটি চোখে পড়েনি। তাকে ওসির রুমে গল্প করে সময় কাটাতে দেখা গেছে। শাহবাগ থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রাতে তাকে (মিজান) সাধারণ হাজতিদের কক্ষে রাখা হচ্ছে না। রাত বাড়লে তাকে অন্য একটি রুমে রাখা হবে। অপরাধী হলেও তিনি পুলিশের একজন ঊর্ধ্বর্তন কর্মকর্তা। তাই সবাই একটু সম্মান করেই রাখা হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের উপ কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা আদালত থেকে তাকে থানা হেফাজতে নিয়েছি। দিনের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় আজ তাকে নিন্ম আদালতে হাজির করা যায়নি। তিনি রাতে থানা হাজতেই থাকবেন। মঙ্গলবার সকালে তাকে আদালতে নেওয়া হবে।’
ডিআইজি মিজান এদিন হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইতে গিয়েছিলেন। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এস কুদ্দুস জামানের বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
আদালতের এ নির্দেশের পর ডিআইজি মিজান হাইকোর্টেই ছিলেন। সেখানে শাহবাগ থানা পুলিশের ওসিসহ পুলিশের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে হাইকোর্টে ডিআইজি মিজানের আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদী জামিন চেয়ে বলেন, ‘জঙ্গি দমনে ডিআইজি মিজানের অনেক ভূমিকা রয়েছে। এই বিবেচনায় আসামি জামিন পেতে পারে।’
এরপর হাইকোর্ট বলেন, ‘ডিআইজি মিজান দুদক সম্পর্কে প্রকাশ্যে যে কথাবার্তা বলেছেন তা পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। ঘুষ দেওয়ার বিষয়ে তিনি ডেসপারেট বক্তব্য দিয়েছেন। …তার জামিন হবে না। আমরা তাকে পুলিশে দেব।’ এই বলে ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদন নাকচ করেন হাইকোর্ট।
গত ২৫ জুন রাতে ডিআইজি মিজানকে বরখাস্ত করে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে আদেশ জারি করা হয়।
বহু ঘটনার পর গত ২৪ জুন ডিআইজি মিজানুর রহমানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার অপর তিন আসামি হলেন- মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না ওরফে রত্না রহমান, ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগ্নে পুলিশের এসআই মাহমুদুল হাসান।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে তিন কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তিন কোটি সাত লাখ পাঁচ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা, ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং আইনের ৪(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি দুদকের ঢাকা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে করা হয়। দুদক পরিচালক মনজুর মোরশেদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply