
মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা এই বিশ্বের সবচেয়ে অসহায় জাতি। তারা বর্তমানে এমন জাতি যাদের কোন দেশ নেই,যাদের কোন নাগরিকত্ব নেই এবং যাদের কোন মৌলিক অধিকার নেই। এই সকল সুবিধাগুলো দেওয়ার কথা বিশ্বের যে কোন রাষ্ট্রের। কিন্তু রোহিঙ্গারা নিজভূমে পরদেশী। যে দেশটিতে তারা কয়েক শত বছর ধরে বসবাস করছে আজ তাদের ই বিতাড়িত করে দিচ্ছে তাদের নিজ দেশের সরকার। বিগত কয়েক দশক অত্যাচার,জুলুম,নির্যাতন,খুন, ধর্ষণ, ঘর-বাড়িতে অগ্নি সংযোগ ছাড়াও এমন কোন চেষ্টা বাদ রাখেনি মিয়ারমানের সেনাবাহিনী ও স্থানীয় নাগরিকেরা। উদ্দেশ্য একটাই এ দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ই নির্যাতিত রোহিঙ্গারা এ দেশে আসতে থাকে, তবে সেই সংথ্যা টা ছিল খুব ই কিন্তু। কিন্তু সর্বশেষ ২০১২ ও ২০১৭ তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এতটা নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছে যে কয়েক মাসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখ রোহিঙ্গা।
যে সকল রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অগ্নিযোগ করে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেই জায়গা গুলো এখন আবার বুলডোজার দিয়ে একেবারে সমান করে দিচ্ছে। মিয়ানমারে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা গ্রাম গুলো যে পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে সেই সকল কাজের চিহ্ন মুছে দেওয়ার জন্য ই এমনটা করছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তাদের একটি দল স্যাটেলাইট হতে প্রাপ্ত ছবি গুলো বিশ্লেষণ এমনটাই জানিয়েছে।
তারা জানিয়েছে প্রায় ৫৫ টি এ রকম গ্রাম কে মিয়ানমান সেনাবাহিনী মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। তারা আরও বলেন, এই সকল গ্রাম গুলো সংরক্ষণ করা দরকার ছিল কারন এই গ্রামগুলো ই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধের চিহ্ন। এই প্রমাণগুলো তাদের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উপর আইনি দাবির চাক্ষুষ প্রমাণ ছিল।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের প্রধান ও দেশটির সমাজকল্যাণ মন্ত্রী উইন মায়াট আয় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ধ্বংসযজ্ঞের প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। বরং তিনি নির্লজ্জের মত দাবি করেন, পূর্বের থেকে ভালো মানের গ্রাম তৈরির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এটি করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এই নির্যাতন কে জাতিসংঘ একবিংশ শতাব্দির ” জাতিগত নির্মূলের যথার্থ উদাহরণ ” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের উপর “জাতিগত নির্মূলের যথার্থ উদাহরণ” এর ঘটনায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে এবং তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে আগুন দিয়ে। এমনি যেসব এলাকায় রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে সেখানে জাতিসংঘের কর্মীদেরও প্রবেশ করতে দেয় নি দেশটির সরকার।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গ্রুপের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন,” ওই গ্রামগুলো রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নির্যাতনের প্রমাণ ছিল, এবং সেগুলো সংরক্ষণ করা উচিত। যাতে জাতিসংঘ নিযুক্ত বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করতে পারে।”
ব্রাড অ্যাডামস আরো বলেন, “বুলডোজার চালানোর ফলে ওই এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গাদের আইনী ভিত্তি মুছে দেবে, এবং সেই সাথে তাদের স্মৃতিও।”
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য মুছে ফেলার যে চেষ্টা এটি নতুন কিছু নয়। কয়েক দশক ধরেই তারা এই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। রোহিঙ্গাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য মুছে ফেলার যে চেষ্টা চলছে সে বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাও অভিযোগ তুলেছিল ২০১৭ সালে।
দশকের পর দশক ধরে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে মিয়ানমার সরকার। রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করা ছাড়াও তাদের দেওয়া হচ্ছে না কোন মৌলিক অধিকার।এমনি কি তারা নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যেতে পারে না।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply