
রাজধানী ও বিভিন্ন জেলার গ্রাহকদের একটি অংশ বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন। গত কয়েক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের ভূতুরে বিল আসায় (আগের কয়েক মাসের বিলের ধারাবাহিকতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি) মানুষ ক্ষুব্ধ। ভূতুরে বিলের প্রতিবাদে কেউ কেউ বিক্ষোভ করছেন, কেউ কেউ আবার উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল নিয়ে মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিলে যেন সিন্দাবাদের ভূত চেপেছে।
জানা গেছে, রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একটি সড়কে পাশাপাশি বসবাস করেন কয়েকটি পরিবার। তারা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) গ্রাহক। চলতি মাসে তাদের অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল এসেছে। ধানমন্ডি ১১৯ নম্বর বাসার এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোলা কাগজকে জানান, গত দুই বছর ধরে তার বিদ্যুৎ বিল ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে আসতো। কিন্তু গত মে মাসে হঠাৎ বিল আসে ৩ হাজার ৮০০ টাকা। তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে আমি যে সব বৈদ্যুতিক জিনিস ব্যবহার করতাম এখনো সেই জিনিসই ব্যবহার করছি। তাহলে হঠাৎ কেন এক লাফে এত টাকা বিল বেশি আসবে? এর পেছনে কারসাজি রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
একই এলাকার আরেকজন গ্রাহকের অভিযোগ, তিনি তার বাসায় একটি ফ্রিজ ও ৬টি এনার্জি সেভিং লাইট ও তিনটি ফ্যান ব্যবহার করেন। জুন মাসে তার বাসায় বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৩ হাজার ৩৮৬ টাকা। এত টাকা বিল কোনোক্রমেই আসতে পারে না। ভূতুরে এ বিলকে বিদ্যুৎ অফিসের কারসাজি বলে মনে করছেন তিনি।
সারা দেশে বিদ্যুৎ বিতরণ করে এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৬টি। এগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো), বাংলাদেশে পল্লী বিদ্যু বোর্ড (বাপবিবো), ডেসকো, ডিপিডিসি, ওজোপাডিকো ও নেসকো।
এরমধ্যে ঢাকায় যে কয়টি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ বিতরণ করে তার মধ্যে ডিপিডিসিও একটি। গ্রাহকরা শুধু ডিপিডিসির দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছে এমন নয়, অন্যান্য বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বারাও মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দুই শতাধিক লোক গত ২৮ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের দাবি ছিল বিদ্যুতের ভৌতিক বিল প্রত্যাহারের। পরে উপজেলা বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ লোকজন শান্ত হন।
ঝালকাঠিতে বিদ্যুতের ভৌতিক বিল থেকে মুক্তি পেতে গত ৩০ জুলাই ঝালকাঠি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিগ্যাল নোটিশ করেছেন এক প্রবীণ শিক্ষক। হয়রানির শিকার সদর উপজেলার কৃষ্ণকাঠি টাইগার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আলী হায়দার তালুকদারের পক্ষে অ্যাডভোকেট ফারুক হোসেন খান এ লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন।
লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা হয়, প্রবীণ শিক্ষক আলী হায়দার তালুকদার ঝালকাঠি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির একজন গ্রাহক। চলতি বছরের ২৩ মে ১৯০৫২০৪১২১৪০৪ নম্বর বিল গ্রাহক বরাবরে ইস্যু করা হয়। ওই বিলে বর্তমান মিটার রিডিং ১০৪৮৯ এবং পূর্ববর্তী রিডিং ৯৮৪০, যার ব্যবহৃত রিডিং ইউনিট লেখা হয়েছে ৭৭০। কিন্তু ওই বিলের বর্তমান ও পূর্ববর্তী রিডিং এর প্রকৃত বিয়োগফল হবে ৬৪০। অর্থাৎ ১৩০ ইউনিট বেশি লেখা হয়েছে। এছাড়া উক্ত হিসাব নম্বরে গত ২১ জুন তারিখে ১৯০৬২০৪১২১৪০৪ নম্বর বিল গ্রাহক বরাবরে ইস্যু করা হয়। ওই বিলেও বর্তমান মিটার রিডিং ১১০৮০ এবং পূর্ববর্তী রিডিং ১০৪৮০, যার ব্যবহৃত রিডিং ইউনিট লেখা হয়েছে ৭২০। কিন্তু ওই বিলের বর্তমান ও পূর্ববর্তী রিডিং এর প্রকৃত বিয়োগফল হবে ৬০০। অর্থাৎ ১২০ ইউনিট বেশি লেখা হয়েছে। সর্বমোট দুইটি বিলে ২৫০ ইউনিট বিল বেশি লেখা হয়েছে। এরকম দেশজুড়ে অনেকেই বিদ্যু বিল নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
তানিয়া নামে একজন জানান, তার বাসায় মাসে বিদ্যুৎ বিল আসে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত। তিনি শুধু একটা ফ্রিজ আর ৩টা ফ্যান ও কয়েকটি লাইট ব্যবহার করেন। আশরাফুন নাহার সুমি নামে একজন জানান, তার ৩ রুমে ৩টা ফ্যান ২টা ফ্রিজ, ১টা টিভি ৩টা লাইট ব্যবহার করেন। বিদ্যুৎ বিল আসে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান খোলা কাগজকে বলেন, বিদ্যুৎ যা খরচ করবে সে অনুযায়ী বিল আসার কথা, বিদ্যুৎ বিল বেশি আসার কথা নয়। তার পরও যদি কোনো গ্রাহক মনে করেন তার বিদ্যু বিল বেশি এসেছে তিনি যেন অভিযোগ করেন। কেউ যদি অভিযোগ করেন তাহলে আমরা অভিযোগ খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম হুমায়ূন কবীর খোলা কাগজকে বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণে অনিয়ম হচ্ছে কিনা তা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং অভিযোগের তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ বিতরণে অনিয়ম করে বা কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত টাকা আদায় করে তাহলে এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দিল্লিতে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ফ্রি
ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে গ্রাহকদের ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের ব্যবহার ফ্রি ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হয়েছে। খবর এনডিটিভি।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, ভারতের মধ্যে এখন বিদ্যুৎ সবচেয়ে সস্তা দিল্লিতে। এর মধ্য দিয়ে বিদ্যুতের সাশ্রয় উৎসাহিত হবে। এরপর ২০১ ইউনিট থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে মূল্য দিতে হবে অর্ধেক। ভিআইপি এবং বড় বড় রাজনীতিবিদরা যদি বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পান তা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেন না। তাহলে কেন সাধারণ মানুষ বঞ্চিত থাকবে?
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply