
ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি কাটিয়ে ভ্রমণপিপাসু ভারত ফেরত যাত্রীদের পেট্রাপোল ও বেনাপোল চেকপোস্টে উপচেপড়া ভিড় গত কয়েক দিন ধরে। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী পেট্রাপোল সীমান্ত (হরিদাসকাটি) দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছেন। একইভাবে বাংলাদেশি যাত্রী বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাচ্ছেন। কেউ যাচ্ছেন বেড়াতে, কেউ যাচ্ছেন ডাক্তার দেখাতে, আবার কেউ যাচ্ছেন স্বজনের বাড়িতে। এদের অধিকাংশই তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে যাচ্ছেন। এতো বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট যাত্রীদের ভিড়ে দু পাশেই কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন পুলিশের নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে রোদ-বৃষ্টি। রোদ-বৃষ্টিতে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে শিশু ও রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়ছেন সঙ্গীরা। বেনাপোল আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ছাপিয়ে যাত্রীদের লাইন ইমিগ্রেশনের সংরতি এলাকা পার হয়ে মেইন সড়ক পর্যন্ত পৌঁছেছে। এভাবেই দু পারেই যাত্রীদের রাত ২/৩টা থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে সাধারণত প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার পাসপোর্ট যাত্রী দু দেশের মধ্যে চলাচল করে থাকেন। এবার কোরবানি ঈদের লম্বা ছুটি পাওয়ায় বাংলাদেশি যাত্রীদের ভারতে যাওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন চারগুণের চেয়েও বেশি যাত্রী ভারতে যাচ্ছেন। প্রতিদিন এ চেকপোস্ট দিয়ে ১১ থেকে ১২ হাজার যাত্রী দু দেশের মধ্যে চলাচল করেন। ঈদের আগে গেছেন বেশি। আর এখন তারা ফিরে আসছেন, যাচ্ছে কম। গত ৮ আগস্ট থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত এ চেকপোস্ট দিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজারেরও বেশি যাত্রী ভারতে যাতয়াত করেছেন। ঈদের তিনদিন আগে থেকে তিনদিন পর পর্যন্ত ভারতে গেছেন বেশি।
সে সময় বাংলাদেশের এপারে কাঁকডাকা ভোর থেকে হাজারো পাসপোর্ট যাত্রীর দীর্ঘ লাইন ছিল। ১৬ আগস্ট থেকে বাংলাদেশিরা যাচ্ছেন কম, তবে ভারত থেকে আসার চাপ অনেক বেশি। ভিড়ের চাপে যাত্রীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। একজন
পাসপোর্ট যাত্রীকে নোম্যান্স ল্যান্ডে পৌঁছাতে ভারতীয় এলাকায় ৪ জায়গায় লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। নোম্যান্স ল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের মধ্যেও ৫ জায়গায় লাইন দিতে হচ্ছে। একই ভাবে এদেশের একজন পাসপোর্ট যাত্রীকে নোম্যান্স ল্যান্ডে পৌঁছাতে বাংলাদেশের ভেতরে ৬ জায়গায় লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। এবার সমস্যা করছে ভারতীয় কাস্টমস। যাওয়ার সময় কোনো যাত্রীই তাদের টাকা দিয়ে সন্তুষ্ট না করে যেতে পারছেন না। একই ভাবে ফেরার সময়ও তাদের উৎকোচ না দিয়ে কেউ আসতেও পারছেন না। ভারতীয় কাস্টমসকে বাধ্যতামূলক দিতে হচ্ছে সন্তুষ্টি ফি। পাসপোর্ট যাত্রীদের অভিযোগ, কর্তব্যরত ভারতীয় কাস্টমসের সদস্যরা টাকার বিনিময়ে যাত্রী লাইনকে বাইপাস করে অর্থের বিনিময়ে লাইন ছাড়া প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে যাত্রী ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। বেনাপোল ও পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন থেকে পার হয়ে দু দেশের নোম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। ভারতীয় গেটে ও বাংলাদেশ গেটে
ধীরগতিতে পাসপোর্ট চেকিং করায় নোম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হচ্ছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এ লাইনের মাত্রাও বাড়তে থাকে। ভারতীয় সীমান্তেও ঘন্টার পর ঘন্টা খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে পাসপোর্ট যাত্রীদের। রোদ বৃষ্টি আর প্রচন্ড গরমে অতিষ্ট হচ্ছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে ছোট বাচ্চা ও রোগীদের ভোগান্তি বেশি হচ্ছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি আবুল বাশার লোকসমাজকে বলেন, ঈদের আগে থেকে তিনদিন পর পর্যন্ত ভারতে গেছেন অনেক বেশি যাত্রী। আর ১৫/১৬ তারিখ থেকে আসছে বেশি। তিনি বলেন, গত ১৬ আগস্ট ১২ হাজারেরও বেশি পাসপোর্ট যাত্রী বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে যাওয়া আসা করেছেন। গত ১৭ আগস্ট এই সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৭০০ জন। যার মধ্যে ভারতে গেছেন ৩ হাজার ২০০, এসেছেন ৭ হাজার ৪০০ যাত্রী। রবিবার এ রিপোর্ট লেখার সময় তিনি জানান, এদিনও ১০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে পাসপোর্ট যাত্রীদের চলাচলের সংখ্যা। ওসি আরও বলেন, কোনো যাত্রী যাতে হয়রানির শিকার না হয় তার জন্য আমরা তদারকি করছি। রোগী ও শিশু সাথে থাকা যাত্রীদের লাইন ছাড়া প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply