
গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
এই সাক্ষাতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে তাঁদের অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘বৈঠকে নেতৃবৃন্দ এই সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখায় তাঁদের সংকল্পের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।’
জাতিসংঘের মহাসচিব এবং বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে আসেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘তাঁরা মূলত রোহিঙ্গা সমস্যা এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়াবলী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি দীর্ঘকাল ধরে, সেই ১৯৭৭ সাল থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে চলে আসতে থাকার বিষয়েও তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ কেবল মানবিক কারণে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করেছে, কেননা এ দেশের জনগণেরও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতে শরণার্থী হিসেবে অনুরূপ আশ্রয় গ্রহণের অভিজ্ঞতা রয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে একটি দ্বীপে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে যেখানে তারা জীবন-যাপনের জন্য আরো ভালো অবস্থা পাবে।’ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার এটার বাস্তবায়নে এখনও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার স্বাস্থ্যসেবাসহ রোহিঙ্গাদের সকল প্রকার মানবিক সহযোগিতা প্রদান করছে, বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আগমনে স্থানীয় জনগণ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সহমর্মিতার কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব এ বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ বজায় রাখার এবং বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন, বলেন প্রেস সচিব।
জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গাদের ধর্মীয় গোড়ামির বিষয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করে তাদের শিক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাদের বিষয়ে মিয়ানমার আসলে কী করতে চায় সে বিষয়টি অনুধাবনের জন্য তিনি মিয়ানমারের ওপর আরো চাপ প্রয়োগের ওপরও জোর দেন।
অ্যান্তোনিও গুতেরেজ এ সময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং বাংলাদেশের সমস্যার সমাধানে সহযোগিতার মনভাব নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং মানবিক বিষয়বলী একযোগেই বাস্তবায়িত হবে।’
বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের ঋণের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহিতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনার নেতৃত্বের প্রতি আমাদের আস্থা এ থেকেই প্রতীয়মান হয়।’
এলডিসিভুক্ত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তোরণের প্রশংসা করে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি এ বিষয়ে ব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নর্সদের সভায় একটি প্রস্তাব পেশ করবেন যাতে বাংলাদেশকে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চুম্বক অংশ তুলে ধরে বলেন, ‘কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ দ্রুতলয়ে এগিয়ে চলেছে এবং গেল অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে।’
জাতিসংঘের মহাসচিব জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা এবং শান্তিরক্ষী প্রেরণে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকারও প্রশংসা করেন।
তিনি ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ প্রদানের একটি আলোকচিত্রও প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, ইআরডি সচিব কাজী শহিদুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ বিভিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই এটি এখন অন্যান্য অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশের কাছে রোল মডেল। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দান করে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রশঙ্গসা কুড়িয়েছে।
তবে এটিও মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ জনবহুল দেশ। এখানে আরো অতিরিক্ত এগারো লাখ জনসংখ্যা নতুন করে হুমকি স্বরূপ। এরা পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করছে, বনাঞ্চল উজাড় করছে, পাহাড় কাটছে। যা আমাদের দেশের পরিবেশের জন্য মারাত্মক।
এদের তাই অতিশীঘ্র তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাবার ব্যবস্থা করতে হবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এম ইউ
Leave a Reply