
মোহাম্মদপুরে একটি ফেয়ারওয়েল ডিনার বা বিদায়ী নৈশভোজ থেকে ফেরার পথে জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক মার্শা বার্নিকাটের গাড়ি বহরে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এই হামলার ঘটনায় বিস্মিত কূটনৈতিক সম্প্রদায়। এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন এবং হতাশ।
সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি জানার পরদিন সরকারের তরফ থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের খোঁজ নেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকারও রোববার বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি অবহিত করে এবং ঘটনার স্বচ্ছ এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জোর দাবি জানায়। মার্কিন দূতের গাড়িতে হামলাকারী অস্ত্রধারীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করার তাগিদ দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
এরপর মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটকে ডেকে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা কথা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। মন্ত্রীর ইস্কাটনস্থ সরকারি বাসভবনের ওই বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ছাড়াও মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কাউন্সেলর বিল মুয়েলার উপস্থিত ছিলেন।
বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা পৌনে ৭টা অবধি চলা পররাষ্ট্র ভবনের বৈঠক শেষে সরকার বা দূতাবাস কোনো পক্ষেরই আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পররাষ্ট্র ভবনের গেটে দাঁড়িয়ে সচিব ও রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা উভয়ে এড়িয়ে যান। বৈঠক প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে- নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত শনিবার রাতে আচমকা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে।
মার্কিন দূতাবাসের তরফে রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলার ঘটনার পাশাপাশি শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে রোববার পৃথক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জরুরি বৈঠক আহ্বান করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যার ফলে সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র ভবনে বৈঠকটি হয়।
কর্মকর্তাদের মতে নানা কারণে ইস্কাটনের বৈঠকটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ হিসাবে তারা যেটা বলার চেষ্টা করেন তা হলো- সরকারের বিদেশ নীতি ও পলিসি বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্য ৩ প্রতিনিধির (মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের) সঙ্গে মার্কিন দূতের এমন বৈঠক এর আগে কখনও হয়নি।
তাদের ধারণা সেখানে নিশ্চিতভাবে রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলার বিষয়ে কথা হয়েছে। মন্ত্রী হয়ত রাষ্ট্রদূতের মুখ থেকেই ঘটনাটি শুনতে চেয়েছেন এবং এ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে যেন কোনো রকম টানাপড়েন বা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন।
ঘটনার বিষয়ে গত ৩৬ ঘণ্টায় সরকার যা জেনেছে তা-ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা হয়ত শেয়ার করতে পারেন। কোটা আন্দোলনে সমর্থন প্রশ্নে বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসের বিবৃতিকে সরকার ভালোভাবে নেয়নি।
বৈঠক শেষে আমেরিকাস অনুবিভাগে কাজ করা এক কর্মকর্তা বলেন- বৈঠক হবে সেটি শুনছিলাম। কিন্তু সেখানে কি আলোচনা হয়েছে তা বলতে পারছি না। তবে ধারণা করতে পারি সম-সাময়িক বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলার পরদিন ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো, বৃটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইক এবং কানাডার হাইকমিশনার বেনোয়েট প্রিফন্টেইন যৌথভাবে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মো. শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটসহ সম-সাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন- মার্কিন দূতের গাড়িতে হামলার ঘটনাটি সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এ নিয়ে পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে ঘটনার পরপরই তদন্ত শুরু করেছে। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশ সরকারের তদন্তের ফল দেখার অপেক্ষায় রয়েছে- এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র।
বিদেশি রাষ্ট্রদূতের গাড়ি বহরে হামলা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক। এর সুশঠু তদন্ত করে দোষীদের বের করে আনতে হবে। এরপর কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যেন ভবিষ্যতে আর কেউ এমন কিছু করবার ধৃষ্টতা না দেখায়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এম ইউ
Leave a Reply