
পুরনো ঢাকার এক ঐতিহাসিক স্থাপনা ‘রোজ গার্ডেন’। এই ‘রোজ গার্ডেন’ ক্রয় করতে যাচ্ছে সরকার। ক্রয়ের জন্য সরকারের খরচ হবে ৩৩২ কোটি টাকা।
তবে এর পেছনের ইতিহাসটা আমাদের অনেকেরই অজানা। ১৯৪৯ সালে ঐতিহাসিক এই বাড়িতেই পূর্ব পাকিস্থান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয়েছিল, যেটি নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমানের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে রূপান্তরিত হয়েছে।
গত প্রায় ৩০ বছর যাবত এই ভবনটি বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবেই রয়েছে, যদিও এটি একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি।
১৯৩০ সালে হৃষিকেশ দাস সাত একর জমিতে এ বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। বাংলাপিডিয়ার তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সাত হাজার ফুট আয়তনের এ বাড়ির সামনে নানা ভাস্কর্য রয়েছে।
বাড়িটি যখন তৈরি করা হয়েছিল, তখন সেখানে নানা প্রজাতির বিরল গোলাপ গাছ ছিল। আর সে কারণেই এর নামকরণ করা হয় রোজ গার্ডেন।
বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, হৃষিকেষ দাসের কাছ থেকে ওই সম্পত্তি ক্রয়ের মাধ্যমে ১৯৩৭ সাল থেকে সেখানে বসবাস শুরু করেন বিত্তশালী ব্যবসায়ী খান বাহাদুর কাজী আবদুর রশীদ। এরপর ভবনটি রশীদ মঞ্জিল নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে তার বংশধরেরাই এই সম্পত্তির মালিক।
১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে একটি বৈঠকে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। ওই বৈঠকটি হয়েছিল বর্তমানে পুরনো ঢাকার কে এম দাস লেনের কে এম বশির হুমায়ুনের এই বাড়িতেই।
প্রথম বৈঠকে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানিকে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি এবং শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, অনেকদিন ধরেই বাড়ির মালিক এটি বিক্রি করতে আগ্রহী ছিলেন। সেজন্য তার সাথে সরকারের তরফ থেকে যোগাযোগও করা হয়।
বাড়িটি কেনার পর সরকার এটিকে নিয়ে কী করবে, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।
তবে বাড়িটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। তবে এখানে একটি জাদুঘরও হতে পারে বলে তিনি ধারণা দিয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুরুল কবির বলেন, যদিও ‘রোজ গার্ডেন’ ভবনটিকে রাজনৈতিক দলের পটভূমি থেকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে, তবে এর বাইরেও এর স্থাপনা শৈলীর গুরুত্ব আছে।
তিনি বলেন, এটি উনবিংশ থেকে বিংশ শতাব্দীর নিউ-ক্লাসিক্যাল স্থাপত্য স্টাইলের উদাহরণ। ভবনটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল, যাতে সেখানে ভারতীয় স্থাপত্য শৈলীর সাথে ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীর সংমিশ্রণ ঘটে।
দেশের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় বিভিন্ন স্থাপনাগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণ করা দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব। এদের কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে দিলে হুমকির মুখে পড়বে আমাদের গৌরবের স্বাধীনতার ইতিহাস।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এম ইউ
Leave a Reply