
গত বছরের এমন সময়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসতে শুরু করে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। একসময় এই সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়। এক বছর পরেও এদের প্রত্যাবাসনে নেই কোনো কার্যকর ভূমিকা। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিশাল চাপ হিসেবে দেখছেন রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা আবুল কালাম। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি।
আশ্রয় নেওয়ার পর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের একটি বছর পার হতে চলছে। তাদের খাবার, থাকা ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নতুন-পুরনো মিলে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। তারা এখন বাংলাদেশের জন্য বিশাল চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তবে, প্রত্যাবাসন শুরু করতে বাংলাদেশ সরকার দ্রুত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ’তিনি আরো জানান, ৩০টি ছোট-বড় রোহিঙ্গা শিবির গড়ে উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, রোহিঙ্গারা ইয়াবা, হত্যা, মানব পাচার, ধর্ষণ ও অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছে। তাছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নেই পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি। এতে টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার বাঙালি ও রোহিঙ্গা দুই পক্ষই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
রোহিঙ্গা নারী দিলদার বেগম ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট পালিয়ে এসে টেকনাফের দমদমিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেন। তিনি বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ আগে তার ঝুপড়ি ঘরে রোহিঙ্গাদের একটি দল হামলা চালায়। এসময় তার হাত-পা রশি দিয়ে বেধেঁ ফেলে টানা হেছড়া করে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।
পরে তার চিৎকারে পাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।’ দিলদার বেগম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য নতুন নয়। অনেক রোহিঙ্গা নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। তাছাড়া একটি বছর পার হতে চলছে। জানিনা কখন নিজ দেশে যেতে পারবো। এখানে শিশু সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। কোনও মতে কষ্টের জীবন কাটছে।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ৩৬ হাজার ৬৫৪জন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখ ৩৩ হাজার ২২৩ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন। এর আগে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা চার লাখ তিন হাজার ৪৩১জন।
উখিয়ার কুতুপালং এবং বালুখালী ক্যাম্পে নির্ধারিত তিন হাজার একর জায়গায় সাড়ে চার লাখের অধিক রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। কক্সবাজার জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলা এবং বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় আরও দুই লাখ রোহিঙ্গা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ রোহিঙ্গা শিশুও রয়েছে।
দেশে ফেরা নিয়ে শংকায় বিপুল এই জনগোষ্ঠী। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারকে সই হলেও দেশে ফেরা নিয়ে শঙ্কিত রোহিঙ্গারা। তাদের মতে, নাগরিক অধিকারসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে ফেরত পাঠানো হলে সংকটের স্থায়ী সমাধান হবে না। আবারও তারা যেকোনও উপায়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসবে। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না।
বর্তমান সময়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের জন্যে। মিয়ানমার থেকে আশানুরূপ সহযোগিতা না পাওয়ায় এর সমাধান মিলছে না শীঘ্রই। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলেরও কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে, যা তারা এড়িয়ে যেতে পারে না।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ ও এস
Leave a Reply